পাইকগাছার কপোতাক্ষ তীরের জাগ্রত চরে গড়ে ওঠা বিচ্ছিন্ন পার রামনাথপুর গ্রামের দেড় শতাধিক মানুষ গবাদি পশু নিয়ে অন্তত দশদিন ধরে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবি পরিবারগুলোতে কাজ না থাকায় খাদ্য সংকটে থাকলেও সরকারি-বেসনকারী পর্যায়ে তাদের পৌছেনি কোন প্রকার ত্রাণ সহায়তা। উল্টো বাঁধ কেটে লবণ পানি ঢুকানোর ফলে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশংকা।
ভূক্তভোগীরা বলছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী জনৈক সোহাগ ও কামরুল বাঁধ কেটে এলাকায় পানি ঢুকিয়েছে। এঘটনায় তারা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন।
জানা যায়, সুন্দরবন উপকূরীয় পাইকগাছা উপজেলার রামনাথপুর মৌজায় রামনাথপুর গ্রামটি দীর্ঘ দিন ধরে পার্শ্ববর্তী কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে সেখানকার মানচিত্র থেকে প্রায নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা গ্রহনের পরও ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী সমাধান আসেনি। এমনকি খুলনা-পাইকগাছা প্রধান সড়কের ঐ অংশটুকুও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভাঙ্গনের মুখে বিলুপ্ত গ্রামটি কপোতাক্ষের অপর প্রান্তে গড়ে ওঠে। যার নাম হয় পার রামনাথপুর। ভাঙ্গনকবলিত অংশসহ প্রত্যন্ত এলাকার ভূমিহীনরা পর্যায়ক্রমে জেগে ওঠা চরের জমির বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে চাষাবাদের পাশাপাশি গড়ে তোলে বসতি। সেই থেকে জাগ্রত চরের নাম হয়, পার রামনাথপুর।
ভাঙ্গনকবলিত রামনাথপুর, দরগামহল ও জেগে ওঠা চরের পার রামনাথপুর রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ নদের গতিপথ পরিবর্তনে এর দক্ষিণ পাশ দিয়ে কপোতাক্ষ নদী খননের উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে খনন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে।
এব্যাপারে স্থানীয়রা পাইকগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর অভিযোগ করলেও কোন ফল আসেনি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেখারুল ইসলাম শামীম জানান, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
পার রামনাথপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম, তপন বিশ্বাস, সঞ্জয় দাশ, মজিদ মোড়ল, সুকুমার, শেখর, মঙ্গল গাইন, রোকেয়া বেগম, চপলা বিশ্বাসসহ ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, অপর পাড়ের দরগাহ মহল গ্রামের সোহাগ ও কামরুল নদীভরাটি জমি তাদের দাবি করে সেখানকার বাঁধ কেটে নদীর পানি ঢুকিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। এতে সেখানকার অন্তত ৫০/৬০ একর জমির আমন আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় তাদের পাশাপাশি গবাদি পশুগুলো অভুক্ত থাকছে।
উল্লেখ্য, গত প্রায় ১০ দিন ধরে অতিবৃষ্টিতে জেগে ওঠা গ্রামটিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরপর নতুন করে বাঁধ কেটে দেওয়ায় ক্ষতির পাশাপাশি চরম হুমকির মুখে রয়েছে সেখানকার ভূমিহনি বাসিন্দারা। এঘটনায় তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খুলনা গেজেট/এমএম