খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর হাজারীবাগে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে আহত কিশোরের মৃত্যু
  আগুন নিয়ন্ত্রণে, খুলনায় পাট গোডাউনসহ ১০ দোকানের কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

আল্লামা আহমদ শফী আর নেই

গেজেট ডেস্ক

হেফাজত আমির আল্লামা আহমদ শফী আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

হেফাজত আমির আল্লামা আহমদ শফীর জানাজার নামাজ শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২ টায় হাটাহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হবে। হাটাহাজারী মাদরাসার সিনিয়র আলেমরা এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে হেফাজত আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও ভূমিকা রেখেছেন।’

অপর এক শোকবাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মরহুম শাহ্ আহমদ শফী ছিলেন ইসলামী চিন্তা জগতের একজন বরেণ্য আলেম। তাঁর মৃত্যু দেশবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’

এর আগে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় হেফাজত ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। এরপরই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা আল্লামা শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ঢাকায় এনে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১০৪ বছর বয়সী আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তার বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক।

তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক।

শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।

১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা। তবে নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য বরাবরই সমালোচিত আহমদ শফী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন আহমদ শফী।

এর আগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন শাহ আহমদ শফী। এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আহমদ শফী, যাদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি পদেও ছিলেন। এ ছাড়া হেফাজতে ইসলাম নামে সংগঠনের আমিরের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির (শূরা কমিটি) বৈঠকে আহমদ শফী পদত্যাগ করেন এবং তার ছেলেসহ দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়। ওই বৈঠকের পর প্রায় শতবর্ষী আহমদ শফীকে মাদ্রাসা থেকে এম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম শহরের একটি হাসপাতালে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ‘বড় মাদ্রাসা’ নামে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং পুরনো কওমি মাদ্রাসা। সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়ন করে।

আহমদ শফী কয়েক দশক ধরে মাদ্রাসাটির মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদে ছিলেন। মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালকের পদে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ শফীর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে কয়েক মাস আগে বাবুনগরীর সঙ্গে শফী সমর্থকদের দ্বন্দ্ব বাঁধে। তাতে বাবুনগরীকে সরিয়ে দিয়ে শফী সমর্থকরা টিকে গেলেও তার রেশ থেকে গিয়েছিল।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কিছু দিন বন্ধ থেকে মাদ্রাসা খোলার পর বুধবার আকস্মিকভাবে মাদ্রাসার কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে। তারা শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুরও চালায়। এই পরিস্থিতিতে সরকার কওমি মাদ্রাসাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!