খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ৪ মার্চ, ২০২৫

Breaking News

  ভারতের বিভিন্ন কারাগারে এক হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশির নাম পাওয়া গেছে, সেখানে গুমের শিকার কেউ আছে কিনা অনুসন্ধান চলছে : গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন
  তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের অর্থপাচার মামলার রায় ৬ মার্চ : আপিল বিভাগ

হুমকির পর কুয়েটের প্রকৌশলীকে মারধর, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির এক নেতার কাছ থেকে মারধরের হুমকি পেয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য বরাবর সোমবার দুপুরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রকৌশলী। এর মধ্যেই এক প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।

যাঁর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে, তাঁর নাম মোল্লা সোহাগ হোসেন। তিনি খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন কুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) শেখ আবু হায়াত।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শেখ আবু হায়াত বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে আমার বাড়ির পাশে মহেশ্বরপাশা উত্তর বনিকপাড়া আল আকসা মসজিদের পশ্চিম দক্ষিণ কোনায় রাস্তার ওপর ঘটনাটি ঘটেছে। মসজিদ থেকে আসরের নামাজ পড়ে ফেরার সময় দেখি মোটরসাইকেলে সোহাগ মোল্লাসহ অন্য দুজন। কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাঁরা আমার গায়ে হাত দেয় এবং আমার চশমা নিয়ে যায়।’

তবে মোল্লা সোহাগ বলেন, ‘আসরের পর উনার (আবু হায়াত) বাড়ির মোড়ে উনার সঙ্গে আমার তর্কবিতর্ক হয়েছে। উনি জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করেন, আমি বিএনপির কর্মী। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়। আমি একজন রাজনৈতিক দলের লিডার হয়ে মারপিট করতে যাব, এটা কেমন কথা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়েটে একটি ভবনের ছাদের কাজ করা নিয়ে কুয়েটের দুই নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) শেখ আবু হায়াত ও মো. গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে মোল্লা সোহাগের বিরোধ চলছে। কাজে প্রকৌশলীদের আরও বেশি প্রফিট নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন ওই ঠিকাদার। এ কারণে প্রকৌশলীদের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিএনপির এই নেতা দাবি করেছেন, তিনি ঠিকাদারির কাজ করেন না।

গতকাল রোববার মুঠোফোনে হুমকি পাওয়ার পর আজ বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন দুই প্রকৌশলী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ নম্বর ভবনের ছাদের ওপরে ওয়াটার প্রুফিংয়ের কাজ নিয়েছেন বিএনপির নেতা ঠিকাদার মোল্লা সোহাগ। কাজটা কয়েক দিন আগে শুরু হয়েছে। রোববার বেলা তিনটার দিকে ঠিকাদার মোল্লা সোহাগ প্রথমে গোলাম কিবরিয়ার ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে কল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ বি এম মামুনুর রশিদ এবং অন্য নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ও হুমকি দেন। তাঁকে গালাগাল করতে নিষেধ করায় তিনি গোলাম কিবরিয়াকেও গালাগাল করেন এবং হুমকি দেন। পরে তিনি একই পরিচয় দিয়ে শেখ আবু হায়াতকেও মুঠোফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ও হুমকি দেন।

কুয়েটের উপাচার্যের কাছে দুই নির্বাহী প্রকৌশলী লিখিত অভিযোগে বলেছেন, কুয়েটের ১৩ নম্বর ভবনের কাজের ছাদের ওয়াটার প্রুফিংয়ের কাজের দর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বাজারদরের সঙ্গে সরকারি নিয়মানুযায়ী ভ্যাট, আইটি ও ১০ শতাংশ প্রফিট (দাপ্তরিকভাবে পূর্বনির্ধারিত) যুক্ত করে দর নির্ধারণ করা হয়। ১০ শতাংশ প্রফিটে আপত্তি ঠিকাদার মোল্লা সোহাগের। তাঁকে আরও বেশি প্রফিট দিতে হবে বলে মুঠোফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়াকে বলেন। এ কথা বলার পর প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন, কিন্তু কোনো কথা না শুনে ফোনেই নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন মোল্লা সোহাগ। এ অবস্থায় প্রকৌশলী দুজন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন।

শেখ আবু হায়াত বলেন, ‘রোববার তিনটা বাজার কিছু আগে খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, “তুই চেয়ারের পরে বসে সবাইরে ১০ লাখ ২০ লাখ টাকার কাজ দিস, আমাকে দিছিস টেন পারসেন্ট লাভে” বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে গালিগালাজ করেন। পাঁচ মিনিট পর ফোন দিয়ে একই রকমভাবে আমাকে দেখে ছাড়বে, আমার বাড়ি আক্রমণ করবে, ফুলবাড়ি গেটে গেলে আমাকে দেখে নেবে—এসব কথা বলে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়। অশ্রাব্য গালিগালাজ করা হয়।’

শেখ আবু হায়াত আরও বলেন, ‘কাজটা দেওয়ার পর তিনি কোনো সময় বলেননি যে কাজটা ছোট হয়েছে বা বড় হয়েছে বা আর কী করা যায়। হঠাৎ ফোনটা দিয়েছেন। কাজটা আড়াই লাখ টাকার মতো।’

নিজের সাংগঠনিক পরিচয় ও প্রকৌশলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মোল্লা সোহাগ। তবে কোনো ধরনের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত না বলে দাবি করেন। মোল্লা সোহাগ বলেন, ‘কুয়েট হচ্ছে থানা বিএনপির সেক্রেটারি আব্বাসের নিয়ন্ত্রণে। আর বাদামতলার ওপাশে থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানের নিয়ন্ত্রণে। আপনি যদি প্রমাণ দেখাতে পারেন কুয়েটে আমার একটা টাকার কাজ আছে, তাহলে যা বলবেন মেনে নেব। এখানে কাজও করে আব্বাস, হুমকি দেয় ওরা, জোর–জুলুম করে ওরা। আমার নেতার অর্ডার আছে, আমি কখনো টেন্ডারে যাই না, কোন ঠিকাদারিতে যাই না, কোন জায়গাতেই যাই না।’

কুয়েটে আপনার কোনো কাজ চলে না থাকলে প্রকৌশলীদের কার হয়ে ফোন দিয়েছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মোল্লা সোহাগ বলেন, ‘এটা আবু হায়াত ও গোলাম কিবরিয়াকে ফোন দিলে ভালো জানতে পারবেন। আমার তো কোনো কাজ চলে না, কিসের জন্য হুমকি দিয়েছি, তা উনাদের কাছে শুনলে ভালো হয়।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!