বিজেপি নেতা ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বক্তব্যের পর দেশটিতে হিন্দি ভাষা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অমিত শাহের ওই বক্তব্যের পর বিরোধী নেতারা বলছেন, হিন্দিকে জোর করে রাষ্ট্রভাষা করার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে দেশে বিভেদ সৃষ্টির জন্য বিরোধীদের দায়ী করেছেন। শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভাষার বৈচিত্র্য এ দেশের সম্পদ। কিন্তু তা নিয়েও বিতর্ক তৈরির চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
আর বিরোধীদের বক্তব্য- ওই বিতর্ক শুরু করেছেন অমিত শাহই। গত মাসে রাজভাষা সংক্রান্ত বৈঠকে শাহ দাবি করেন, দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অন্তত ৭০ শতাংশ বিষয় এখন হিন্দিতেই লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। তার পরামর্শ ছিল, যদি দুই অ-হিন্দিভাষী গল্প করেন, সেখানে যেন বিদেশি ভাষার পরিবর্তে (ইংরেজি) ভারতীয় ভাষায় (হিন্দি) কথাবার্তা হয়।
তবে অমিত শাহের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে মোদি বলেন,ভাষাকে কেন্দ্র করে অহেতুক বিবাদ তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। বিজেপি প্রত্যেক ভাষাকে সম্মান করে। আঞ্চলিক ভাষা ভারতের উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ সেতু। সেই কারণেই জাতীয় শিক্ষা নীতিকে প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাকে সমগুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যা আমাদের আঞ্চলিক ভাষার প্রতি দায়বদ্ধতাকেই প্রমাণ করে।
মোদির এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের একজন নেতা বলছেন, তা হলে কি ধরে নিতে হবে ভাষা প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের মতপার্থক্য রয়েছে। কারণ, দু’জনে পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, এটা পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপ। সঙ্ঘ তথা বিজেপির দীর্ঘ দিনের লক্ষ্য, দেশে একটি ভাষাকেই প্রাধান্য দেওয়া এবং তা হলো হিন্দি। অমিত শাহ এ নিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে চটিয়ে রেখেছেন। এ দিকে সামনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। যেখানে আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থন প্রয়োজন হবে বিজেপির। তাই হিন্দি ভাষা প্রশ্নে সুর নরম করার কৌশল নিয়েছেন মোদি।
বিরোধীদের মতে, হিন্দি আরও পাঁচটা স্বীকৃত ভাষার মতোই সরকারি কাজে ব্যবহারের ভাষা। সেই হিন্দিকেই জোর করে রাষ্ট্রভাষা করার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিরোধীদের কথায়, এ হলো হিন্দু-হিন্দুস্তান-হিন্দি নীতির অঙ্গ। সেই কারণে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে শুরুতে হিন্দি ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক করতে চেয়েছিল মোদি সরকার। মূলত দক্ষিণের রাজ্যগুলোর চাপে পরে পিছিয়ে যায় তারা। তবে অমিত শাহের বক্তব্যেই স্পষ্ট, বিজেপি মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে আসেনি।
বস্তুত হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে ভারতে বিভক্তির ইতিহাস অনেক পুরনো, এখন সেই বিতর্কই আবার নতুন আকারে মাথা চাড়া দিচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার ঠিক পরদিনই সরকারের কাছে জমা পড়ে নতুন একটি শিক্ষানীতির খসড়া, যা প্রস্তুত করেছিল দেশের নামী মহাকাশবিজ্ঞানী কে কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
ওই ‘খসড়া জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১৯’-এ বলা হয়েছিল, বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে ভারতের স্কুলগুলোতে যে ‘তিন ভাষা ফর্মুলা’ চালু আছে সেটা শুধু বহাল রাখাই যথেষ্ঠ নয় – তা এখন বাচ্চাদের জন্য আরও অনেক কম বয়সে চালু করা দরকার।
দক্ষিণ ভারতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস আছে তামিলনাড়ুর দল ডিএমকের।
প্রায় ৫৭ বছর আগে হিন্দিবিরোধী দাঙ্গায় তামিলনাডুতে প্রায় ৭০ জন নিহত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু কথা দিয়েছিলেন, হিন্দিভাষী নয় দেশের এমন কোনো রাজ্যেই জোর করে হিন্দি চাপানো হবে না।
সূত্র : আনন্দবাজার।