নওগাঁর মহাদেবপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে হিজাব নিয়ে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা চালানোর অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার(১৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৩টার দিকে নওগাঁ শহরের বইপট্টি ও কুশারসেন্টার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন মহাদেবপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা কিউ এম সাঈদ টিটো ও কুশারসেন্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা কাজী সামছুজ্জোহা মিলন। তাদের বয়স যথাক্রমে ৫৫ ও ৪৫ বছর।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল গত ৯ এপ্রিল থানায় মামলা করেন। এরপর এ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পরার কারণে কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে মারধরের তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনের বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে।
তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, হিজাবের কারণে কাউকে মারা হয়নি। স্কুলের নির্ধারিত পোশাক না পরার কারণে গত বুধবার আমোদিনী পালসহ দুই শিক্ষক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি, বারবার সতর্ক করার পরও স্কুল ইউনিফর্ম না পরার কারণে তাদের ‘শাসন’ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, স্কুলে নিয়োগ বিনিময়ে প্রায় কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্তের বিরুদ্ধে। নিয়োগের সময় নেয়া অর্থ স্কুলের উন্নয়ন ফান্ডে দেয়ার কথা থাকলেও তা করেননি তিনি।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আগামী ১০ মে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হবেন আমোদিনী পাল। তিনি প্রধান শিক্ষক হয়ে যেন ধরণী কান্ত বর্মণের আর্থিক লেনদেনের হিসাব চাইতে না পারেন সে জন্য সহকারী আরেক শিক্ষক রবিউল ইসলামকে নিয়ে হিজাব বিতর্ক তৈরি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিদের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘আমোদিনী পালের করা মামলায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ, সভাপতি মাহমুদুল হাসান সুমন, নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার গহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা সালাউদ্দিন আহমেদসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।’
আমোদিনী পালের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পলাতক থাকায় অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার কারা সম্ভব হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
হিজাব পরায় মারধরের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ প্রামাণিক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান।
সোমবার রাত ৮টার দিকে তদন্ত কমিটি মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্কুলড্রেস না পরার কারণে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দুই শিক্ষক বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল। হিজাব পরার কারণে শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে, এমন তথ্য তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, ‘নির্ধারিত পোশাক (স্কুলড্রেস) পরে না আসার কারণে দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে শাসন করার ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল করা হয় হিজাব পরার শাস্তি হিসেবে।
‘কথিত হিজাব বিতর্কের অন্তরালে রয়েছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্ব, অনিয়ম ও দুর্নীতি। ধর্মীয় ইস্যুতে গুজব ছড়ানো হয়, যা ছিল অপ্রত্যাশিত। সবার উচিত, কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া।’
খুলনা গেজেট/ এস আই