রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চার সপ্তাহ পর সরকারের ঘোষণা এলো তালেবানের পক্ষ থেকে। তবে পূর্ণাঙ্গ সরকার গঠন না করে গঠন করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তালেবান নেতা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে এ সরকারের প্রধান করা হয়েছে। এতদিন সরকারপ্রধান হিসেবে যার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল, সেই আব্দুল গনি বারাদারকে করা হয়েছে সরকারের উপপ্রধান।
তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ মঙ্গলবার রাতে নতুন সরকারের ঘোষণা করেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
মুখপাত্র মুজাহিদ বলেন, তালেবানের উপনেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংগঠনের রাজনৈতিক প্রধান শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানেকজাইকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। আর তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুবকে করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
তিন সপ্তাহ আগে আফগানিস্তানে রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর কয়েক দফা সরকার ঘোষণা স্থগিতের পর মঙ্গলবার তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের দেশের মানুষ নতুন একটি সরকারের জন্য অপেক্ষা করছিল।’
তালেবান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এর আগে মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রপ্রধান এবং মোল্লা বারাদার ও মোল্লা আব্দুস সালামকে তার ডেপুটি হিসেবে মনোনীত করেন। এরপরই সরকারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তালেবান অবশ্য সরকার ঘোষণার আগে অর্থমন্ত্রী, ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছিল। পূর্বে ঘোষিত চার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তালেবান প্রধান আখুনজাদা ধর্মীয় বিষয় ও ইসলামি বিধিবিধান অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালনার বিষয়ে নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা নীতি নির্ধারক হিসেবে থাকবেন। কোনো পদে না থাকলেও নতুন সরকারে তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তালেবানের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত কান্দাহারে জন্ম তাঁর। তাঁকে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তালেবানের আরেক নেতা বলেছেন, ‘মোল্লা হাসান আখুন্দ ২০ বছর ধরে রেহবারি শুরার প্রধান হিসেবে কাজ করছেন এবং তালেবান নেতাদের মধ্যে তাঁর অনেক সুখ্যাতি রয়েছে।’
এদিকে এনডিটিভি জানিয়েছে, অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিচিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে দলটির রাজনীতিতে যুক্ত রয়েছেন মোল্লা হাসান আখুন্দ। তালেবানের আগের সরকারেও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকাতেও নাম রয়েছে তাঁর।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা ও কাবুলে তালেবান সরকারের পতনের পরে পাকিস্তানের বালুচিস্তানে গঠিত তালেবান ‘কোয়েটা শুরা’র নেতৃত্বে ছিলেন আখুন্দ। বারাদারের মতো তাঁকেও ২০১০ সালে পাকিস্তান প্রশাসন গ্রেপ্তার করেছিল। পরবর্তীতে মুক্তি পান তিনি।
প্রায় দুই দশক ধরে আখুন্দজাদার ঘনিষ্ঠতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত আখুন্দ তালেবানের শান্তি আলোচনা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘রেহবারি শুরা’রও প্রধান ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম