হাড় কাপাঁনো শীতে মানুষ যখন ঘর থেকে বেরহতে পারছেনা, থমকে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন সংগ্রামের চাহিদা, ঠিক তখনই অভাবের সংসারের কথা চিন্তাকরে প্রতিদিনের মতো হাড় কাপাঁনো শীতে ভ্যান এবং পানির ড্রাম নিয়ে বের হয়েছেন সমার বৈরাগী।
মোংলা উপজেলার মধ্য হলদিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা সমার বৈরাগী, রোগাক্রান্ত চেহারা গায়ে নেই শীতের তেমন গরম পোষাক, ছোট বেলায় বাবা মারা যাবার কারনে তেমন পড়াশুনা করতে পারেননি,পরের বাড়ির গরু,মহিষ দেখভাল সহ গৃহস্থলি কাজ করতে হয়েছে তাকে। মা স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে তার তার সংসার চলছে পানি বিক্রি করে।
কথোপকথন সমার বৈরাগী খুলনা গেজেটকে জানান ছোট বেলা থেকে জীবন যুদ্ধে নেমেছি শীত গরম আর বর্ষা কোনটাই টের পাইনা পেটের ক্ষুদার জ্বালায়। একদিন ইনকাম না করলে পরের দিন মা স্ত্রী সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। তার উপরে বর্তমানে মরার উপর খড়ার ঘাঁ হয়ে দাড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের উর্দগতি।
এক সময় মানুষের বাড়ি মাইনে কাজ করতাম। কিন্তু সে আয়ে আমার সংসার চালাতে না পেরে পরিবর্তীতে মানুষের দেয়া ধান বিক্রি করে একটা পায়ে চালানো ভ্যান ক্রয় করি। পরে তা চালানো শুরু করি। রাস্তাঘাট ভালো ছিলোনা তখন খুব কস্ট হতো ৮০/১০০ টাকা আয় হতো। দিন যতো বাড়তে লাগলো সংসারে খরচও বাড়তে লাগলো। হঠাৎ বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে পড়ে যাই আরও বিপাকে।
ভ্যান চালোনোর ইনকামে সংসার চালাতে পারতামনা। পরে সেই ভ্যানে করে মানুষের বাড়ি বাড়ি পানি দেবার কথা চিন্তা করি। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাই। তখন পানির খুব সমস্যা ছিল। আশপাশে কোন পুকুর ছিলনা। দূরদূরান্ত থেকে পানি এনে মানুষের বাড়ি দেয়া শুরু করি। সেই থেকে আজ পযন্ত এই ১০/১৫ বছর পানি বিক্র করে চলছি। বর্তমানে একড্রাম পানি ২০ /২৫ টাকায় বিক্রি করছি। প্রতিদিন ৫০০ টাকা হয়। তবে লবনের সিজনে খুবই সমস্যা হয় তখন পুকুরের পানি লবন হয়ে গেলে পৌরসভার পানির লাইনে এসে দাড়িয়ে পানি নিতে হয়। এতো কস্ট এখন আর শরীরে সায় দেয়না। টাকা থাকলে একটা দোকান দিয়ে ব্যবসা করতাম। ছেলে দুটো এখনো ছোট, একজন সপ্তম শ্রেনীতে আরেক জন ৪র্থ শ্রনীতে পড়ে। মা স্ত্রী সন্তানদের জন্য এ গাধার খাটনি খাটছি। ছেলে দুটোকে পড়াশুনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে পারলে আমার আর কোন কষ্ট থাকবেনা।
অশ্রু সিক্ত নয়নে নিজের জীবনের করুন কস্টের কথা গুলি এভাবেই তুলে ধরেন সমার বৈরাগী।
খুলনা গেজেট/ এসজেড