খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখান শিক্ষার্থীদের

হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিস্থিতি থমথমে, পুলিশ-র‌্যাব মোতায়েন

গেজেট ডেস্ক

চট্টগ্রামের মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধের সরকারি ঘোষণা প্রত্যাখান করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধের আদেশ দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মসজিদের মাইকে এ আদেশ প্রত্যাখানের ঘোষণা দিয়েছে।

তারা বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসা সরকারি নয়। তাই এই মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকার দিতে পারে না। আমরা এ আদেশ মানি না। মাদ্রাসার শুরার সদস্যরা বৈঠকে মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে আমরা তা মেনে নিব।’ অন্যথায় আন্দোলনের দাবানল জ্বলে ওঠবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।

সন্ধ্যার পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শুরা সদস্যদের নিয়ে বৈঠক চলমান রয়েছে।

এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতরে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবারও থেকে থেকে বিক্ষোভ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সারাদিনই মাদ্রাসার প্রতিটি ফটক বন্ধ থাকায় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থাতেই ছিলেন।

বৃহস্পতিবারও মাদ্রাসার ভেতরে শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়েছে এবং মাদ্রাসার শিক্ষক আনাস মাদানীকে অবিলম্বে বহিষ্কার কার্যকর না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে শিক্ষার্থীরা ভেতরের মসজিদ থেকে মাইকিং করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

যদিও শিক্ষার্থীদের শান্ত রাখতে সব দাবি দাওয়া মেনে নেয়া হবে বলে শিক্ষকরা আশ্বাস দিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে হাটহাজারীর মাদ্রাসাটি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

বুধবার দুই পক্ষের বিক্ষুব্ধ অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোটা এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত ২৪ অগাস্ট পুনরায় শুরু হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার কার্যক্রম। কিন্তু এর মধ্যে মাদ্রাসার মাদ্রাসার পরিচালক আহমদ শফী এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বাবা আহমদ শফীর অসুস্থতার সুযোগে তার ছেলে আনাস মাদানী মাদ্রাসায় আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থীকে হয়রানি করছেন। এমন অবস্থায় তারা আনাস মাদানীকে অবিলম্বে বহিষ্কারসহ ছয় দাবিতে বুধবার থেকে বিক্ষোভ করে আসছেন।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন যে, আহমদ শফী বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন যে মাদ্রাসাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেবেন। সেইসঙ্গে তার ছেলের প্রত্যাহার আদেশে তিনি না বুঝে স্বাক্ষর করেছেন জানিয়ে আদেশটি বাতিল করবেন বলে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন।

এরপর পর তারা বেলা ১১টা নাগাদ আবার মাঠে নেমে বিক্ষোভ জানাতে থাকেন। এসময় তারা মাদ্রাসার ভেতরে আহমদ শফীর কার্যালয়সহ, শিক্ষকদের থাকার জায়গায় ভাঙচুর করেছে বলেও জানান স্থানীয় সাংবাদিক আবু তালেব। মাদ্রাসার ভেতরের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনি এসব তথ্য পাওয়ার কথা জানান।

গতকাল ওই বিক্ষোভের পর মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এই কমিটি আগামী শনিবার আবার বৈঠকে বসবে বলে জানায়। এই সিদ্ধান্তের কারণে রাত ১১টার পর বিক্ষোভকারীরা শান্ত হলেও বৃহস্পতিবার সারাদিন মাদ্রাসা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাদ্রাসার বাইরে কড়া অবস্থান নিয়ে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত তিন শতাধিক সদস্য। মাদ্রাসার গেইট বন্ধ থাকায় সেইসঙ্গে নির্দেশ না থাকায় তারা ফটকের বাইরেই অবস্থান নিয়েছেন। তবে ভেতরে যদি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার ওসি মাসুদ আলম।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার আশপাশের দোকান-পাট কেউ খোলেনি বলে জানা গেছে। তবে মাদ্রাসার একজন শিক্ষক জানিয়েছেন সকাল থেকেই মাদ্রাসার ভেতরের পরিবেশ শান্ত এবং স্বাভাবিক রয়েছে। ছাত্ররা যার যার ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন।

শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন যে, আনাস মাদানীর বহিষ্কারাদেশ যেন আজ কালকের মধ্যেই কার্যকর করা হয়।

ছাত্রদের সব দাবি দাওয়া শিগগিরই মেনে হওয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকরা ছাত্রদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানান সেখানকার শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরি। “ছাত্ররা এখন মাদ্রাসার ভেতরে যার যার রুমে অবস্থান করছে। ছাত্র শিক্ষক সবাই নিরাপদে আছেন। মাদ্রাসার সূরা কমিটি আছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা শিক্ষার্থীদের বলছি আমাদের ম্যানেজিং কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে। তোমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে।” বলেন মি. নিজামপুরি।

বাংলাদেশ অন্যতম প্রাচীন হাটহাজারী মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অস্থিরতা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। মাদ্রাসার পরিচালক আহমদ শফীর পরেই জুনায়েদ বাবুনগরীর অবস্থান ছিল। কিন্তু কয়েকমাস আগে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর নেতৃত্বে তার সমর্থকরা পরিচালনা কমিটির বৈঠক করে মি: বাবুনগরীকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়। তখন থেকে দুটি গ্রুপের এই কোন্দল ঘনীভূত হয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!