খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  হত্যা মামলায় মমতাজ ৪ দিনের রিমান্ডে
  নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিল শুনানি ফের বুধবার

হস্তান্তরের ২৪ ঘণ্টা পরেও মুক্তি মেলেনি সুন্দরবনে ফেলে যাওয়া ৭৮ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকায় একটি চরে ফেলে যাওয়া ৭৮ বাংলাদেশেীকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তরের ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো মুক্তি মেলেনি তাদের। সোমবার (১২ মে) বেলা ১০টায় তাদেরকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা না আসায় রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। রোববার (১১ মে) রাত ১০ টায় কোস্ট গার্ডের সদস্যরা তাদেরকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে।

এদিকে এই প্রচন্ড গরমে সংকীর্ণ জায়গায় অবস্থান এবং বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে যেয়ে পুশইনকৃত এসব বাংলাদেশীরা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একই সাথে কষ্ট পাচ্ছেন নড়াইল জেলাসহ অন্য জায়গা থেকে নিতে আসা তাদের স্বজনরা। অভিযোগ উঠেছে কোস্টগার্ডের অবহেলার কারণে সকালে প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও পুশইনের স্বীকার হয়ে দেশে ফিরে আসা এসব বাংলাদেশীরা বাড়িতে ফিরতে পারেনি।

নড়াইল জেলার কালিয়া থানার মাদুভাশা গ্রামের লিটন মিয়ার ভাগ্নে নাজমুল হোসেন জানান, স্বজনদের নেওয়ার জন্য রোববার রাত্রে শ্যামনগর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে মোবাইলে অবহিত করা হয়। সেই মোতাবেক সোমবার সকালে তারা শ্যামনগর থানা পৌছায়। সোমবার বেলা ১০টায় তাদেরকে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল।

তিনি অভিযোগ করেন বলেন, বেলা দশটার দিকে তার মামাসহ অন্যদের স্বজনদের হাতে উঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে জানানো হয় বিকাল তিনটায় প্রেস কনফারেন্স এর পর স্বজনদের কাছে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীদের হস্তান্তর করা হবে। তবে বিকাল পেরিয়ে রাত দশটা বাজলেও তার অসুস্থ মামাসহ অন্য কাউকে হস্তান্তর করা হয়নি।

নাজমুল হোসেন আরো বলেন, কোস্টগার্ডের খামখেয়ালীপনার কারণে তাদের সজনরা সকাল থেকে প্রচন্ড গরমে অপেক্ষা করে কষ্ট ভোগ করছেন। শুধু নিজেদের ক্রেডিট নেওয়ার জন্য কোস্টগার্ডের মতন একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী অসুস্থ এতগুলো মানুষের সাথে এমন অমানবিক আচরণ করল।

উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশী আবু হিলালের খালু মিজানুর রহমান জানান, ভারতীয় কোস্টগার্ড এবং বিএসএফ যে পরিমাণ নির্যাতন করেছে, এই একদিনে প্রচন্ড গরমে আটকে রেখে বাংলাদেশের কোস্টগার্ড তার থেকে কোন অংশে কম নির্যাতন করলো না। মারধর না করেও ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে একটা দিন অসুস্থ মানুষগুলোকে বিলম্ব করিয়ে চরম অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন তারা।

ফিরে আসা বাংলাদেশীদের মধ্যে অনিক শেখ ও আবু বক্কার বলেন, বিএসএফ এবং ভারতীয় কোস্টগার্ডের লাঠি পেটায় অনেকের পীঠ ও পাছার চামড়া উঠে গেছে। সকাল থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা তীব্র গরমের মধ্যে এসব অসুস্থ মানুষগুলোকে মুক্তির আসায় বসিয়ে রেখে ভোগান্তিতে ফেলেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মী সুলতান শাহজাহান জানান, ৭৮ বাংলাদেশীকে বেলা ১০টায় তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা আমাদেরকে জানানো হয়। সেই সকাল থেকে নিউজ কভার করার জন্য কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের অপেক্ষমান রাখা হয়। পরবর্তীতে বিকাল তিনটায় প্রেস কনফারেন্সের কথা জানানো হয়। সন্ধ্যার কিছু আগে রাত সাড়ে ৯ টায় সংবাদ সম্মেলনের বিষয় সাংবাদিকদের প্রেস নোট সরবরাহ করা হয়। তবুও রাত ১০টা পর্যন্ত শ্যামনগর থানা চত্বরে অপেক্ষা করেও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তাদের দেখা মেলেনি। ফিরে আসা বাংলাদেশীদের নিতে আসা স্বজনরা এ সময় কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। একপর্যায় রাতে সাড়ে ১০টার দিকে কোস্টগার্ডেও লোকজন এসে জানান মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করা হবে। মুক্তির অপেক্ষায় সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নির্যাতনের শিকার অসুস্থ্য বাংলাদেশীদের।

এবিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে কোস্টগার্ড মোংলার মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা কাওছার আলম জানান, মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করা হবে। ফিরে আসা ৭৮ বাংলাদেশীকে রাতে শ্যামনগরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!