খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু

হরিণাকুণ্ডুতে বোরোর ভালো ফলনেও শঙ্কায় কৃষক !

হরিণাকুন্ডু প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার দু’এক জায়গা ছাড়া প্রায় প্রতিটি স্থানেই বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও কেটে ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে হাজারো কৃষক। কারণ হিসেবে একদিকে রয়েছে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা, অন্যদিকে শ্রমিক সংকট। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার উৎসব। তবে বোরো মৌসুমের পুরো ধান কেটে কৃষকের ঘরে উঠতে আরও ৮-১০ দিন সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছে উপজেলা কৃষি দপ্তর।

ধান কেটে ঘরে তোলার আনন্দে কৃষকের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও বৈরি আবহাওয়ায় কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এরই মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে মাঝেমধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে কালবৈশাখী। এ ছাড়া রয়েছে শ্রমিক সংকট। করোনাকালে প্রায় দুই সপ্তাহ অনেকটা ঘরবন্দি থাকার কারণে আয়ের আশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে শ্রমিকদের একটা বড় অংশ। ফলে কিছুটা হলেও শ্রমিক সংকটে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

এ ছাড়া দু-এক দিনের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন আভাসের ফলে হাজার হাজার কৃষকের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। চলতি বোরো মৌসুমে প্রচুর ফলন হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছিল। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে গরম হাওয়া বয়ে গিয়েছিল। এতে উপজেলার প্রায় ৫০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে গত বছরের চেয়ে ফলন কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি। ২৫ হাজারেরও বেশি প্রান্তিক কৃষক এবার এই বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। প্রথম দিকে অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো ক্ষেতে সেচ, সার ও কীটনাশক দিতে পারায় এবার বাম্পার ফলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এবার উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে চলতি মাসের প্রথম দিকে কালবৈশাখীর সঙ্গে গরম হাওয়া বয়ে যাওয়ায় ৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কম অর্জিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তা গত বছরের চেয়ে কম নয়। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ কৃষক ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। বাকি ৭০ ভাগ কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলতে আরও ৮-১০ দিন সময় লাগতে পারে। দেরিতে ধানচাষ করার ফলে এসব ক্ষেতের ধান ঘরে তোলার উপযোগী হয়নি।

রফিউদ্দিন নামে হরিণাকুণ্ডুর এক কৃষক জানান, তিনি এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন। গতবারের চেয়ে এবার ফলনও হয়েছে ভালো। কিছু জমির ধান ঘরে তুলতে পারলেও তার এখনও প্রায় দুই বিঘা জমির ধান কাটা বাকি রয়েছে। একটু দেরিতে এই ধানের আবাদ করেছিলেন। তাই এসব জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে এখনও বেশকিছু দিন সময় লাগবে। আবার সময়মতো শ্রমিক না পাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। কারণ অধিক আয়ের আশায় এলাকার অনেক শ্রমিক দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। তাছাড়া যদি এখন ঝড়-বৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষেতেই সব ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এসব নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানান এই কৃষক।

উপজেলার বিন্নি গ্রামের কৃষক ওসমান গনি বলেন, এবার তিনি ৪ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলেন। কিছুদিন আগে ঝড়ের সঙ্গে গরম হাওয়ার ক্ষেতের অনেক ধানই নষ্ট হয়ে গেছে তার। যেটুকু জমিতে আছে, তাও এখনও কেটে ঘরে তুলতে পারেননি। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন সময় মতোশ্রমিক না পেলে কৃষি অফিস থেকে মেশিন নিয়ে ক্ষেতের ধান কাটবেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজু আহাম্মেদ বলেন, আমার ব্লকে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই ব্লকে ধান একটু দেরিতে রোপণ করায় দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গরম হাওয়া কোন ক্ষতি করতে পারেনি। ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কেটে দেওয়া হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান বলেন, এরই মধ্যে ৩০ ভাগ কৃষক ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। বাকি কৃষকরাও ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন। গত বছরের সমপরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা এবার অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলায় দুটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!