খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ঢাকার চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি, নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র
  ২০২৫ সালে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

হরিণাকুণ্ডুতে থেমে নেই কিস্তি আদায়

হরিণাকুন্ডু প্রতিনিধি

করোনাকালে কর্মহীন হয়ে জীবন-জীবিকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। এর মাঝে চলছে লকডাউন। জীবন বাঁচাতেই যখন হিমশিম খাচ্ছেন তারা তখন যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো এসে পড়ছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ঋণের কিস্তির চাপ। প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেসরকারি সংস্থাগুলো ঋণের কিস্তি আদায় করছে বলে অভিযোগ তাদের।

মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশের মতো ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতেও চলছে লকডাউন। ফলে ঘরবন্দি হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। দুই বেলার খাবার জোগাতেই যেখানে হিমসিম খাচ্ছে এসব দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো তার ওপর আবার এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তির চাপে দিশেহারা তারা।

জানা গেছে, উপজেলায় ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, সৃজনী, পদক্ষেপসহ প্রায় ১৫টি এনজিওর কার্যক্রম চলমান। এসব এনজিও থেকে কেউ সাপ্তাহিক আবার কেউ মাসিক কিস্তিতে ঋণ নিয়েছে ভ্যানরিকশা, ইজিবাইক, পাখিভ্যান, আলমসাধু, নছিমন করিমনসহ স্থানীয় বিভিন্ন যানবাহন কিনে তা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ও ঋণের কিস্তি দেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। শহর ও গ্রামের প্রায় প্রত্যেক চা, ছোটখাটো মুদি দোকানিরও একই অবস্থা। সরকারের করোনা সংক্রমণরোধে লকডাউনে তাদের কোন আয় ইনকাম না থাকায় এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না ঋণগ্রহীতারা। কিন্তু এনজিওরাও এসময় কিস্তি ছাড়তে নারাজ। এ অবস্থায় ঋণগ্রস্ত মানুষেরা পড়েছে বিপাকে।

ঋণের কিস্তি আদায়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না এসব এনজিও কর্তৃপক্ষ। তারা ঋণের কিস্তির জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে ঋণগ্রহীতাদের ওপর। গ্রামের নারীদের নিয়ে সমিতির মাধ্যমে চলছে এই ঋণ আদায় কার্যক্রম। পাড়ায় পাড়ায় টেবিল-চেয়ার ও পাটি পেতে ঋণগ্রহীতা নারীদের একত্রিত করে চলে কিস্তি আদায়। ফলে থাকছে না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির বালাই। এরই মধ্যে উপজেলার গ্রামীণ ব্যাংক ও আশা এনজিওর কয়েকজন কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন থেকে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।

এরপরও তারা প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় ছুটছেন কিস্তি আদায়ের জন্য। ফলে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। এ অবস্থায় গত ২৪ জুন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এসব এনজিওকে জোর করে ঋণের কিস্তি আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ঋণগ্রহীতারা। বিশেষ করে আশা এনজিওর উপর ঋণগ্রহিতারা এই অভিযোগ বেশি করছে। তারা কোন কিছুই তোয়াক্কা করছে না বলে জানিয়েছেন জোড়াদহ গ্রামের একজন সমাজসেবক মোঃ হেলাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, করোনাকালে লকডাউনে অসহায় মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে তাদেরকে (আশা এনজিও) একটু মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা আমার সাথেও তর্কে জড়িয়ে পড়ে।

জোড়াদাহ পূর্বপাড়া এলাকার একজন পাখিভ্যান চালক জানান, আমার বৌয়ের নামে স্থানীয় আশা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ভ্যান কিনেছিলাম। প্রতি সপ্তাহে আটশ টাকা কিস্তি দেওয়া লাগে। লকডাউনে পুলিশ রাস্তায় বের হতে দিচ্ছে না তাই কামায় রোজগার বন্ধ কিস্তি দিব কিভাবে এনজিও-র লোকেরা ছাড়ছে না তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় আশা এনজিওর ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চিঠি পাইনি। তবে আমরা কারও কাছ থেকে জোর করে কিস্তি আদায় করছি না। আমরা আরও অসহায় মানুষকে ঋণ দিচ্ছি।

তবে ব্র্যাকের দাবি প্রোগ্রামের ম্যানেজার ইদ্রিস আলী জেলা প্রশাসকের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কোনো কর্মী গ্রামে কিস্তি আদায়ের জন্য যাচ্ছেন না। যদি কেউ অফিসে এসে ঋণের কিস্তি দেন তবে সেটাই আমরা নিচ্ছি।

ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমিও পেয়েছি। জোর করে কিস্তি আদায় না করতে বুধবার সব এনজিও কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!