হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সকলের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক লে. (অব.) ড. হারুনুর রশিদ ভুইয়াকে জনসমক্ষে হাজির করারও আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকার নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষে সারা দেশে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে এবং হত্যা, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
তিনি বলেন, দেশটা আজকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে। দিন দিন নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরকার যতই ছলচাতুরী করুক না কেন গণদাবির কাছে পদত্যাগ করতেই হবে। মানুষ যখন প্রতিবাদ শুরু করেছে, এই প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত থাকবে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে যে, গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয় নাই। অথচ শিশু আহাদ, সামীর থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ পথচারী সকলেই গুলিতে নিহত হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, হত্যার সংখ্যা অনেক লম্বা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনাগুলোর বর্ণনা দেয়া হলেও কোটা বিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। মৃত্যুকে ধামাচাপা দেয়ার জন্যই মৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাছাড়া সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার বাণিজ্য অব্যাহত রাখা হয়েছে।
ডোনার আটক: মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরুদ্দিন ওয়াসিমসহসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে সরকার দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে, একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী এবং কোটা সংস্কারের নেতাদেরকে নির্যাতন করা হবে না, অপরদিকে প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, প্রতিবন্ধী শিশু এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার এমনকি চাকরিজীবীরা পর্যন্ত এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যারা প্রকাশ্যে সাধারণ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করলো তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরঞ্চ তাদের নিয়ে সরকার প্রধান মায়া কান্না করছে।
সারাদেশে ৯ হাজারের অধিক নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সাবেক এমপি, মন্ত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মী অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীদের মতো ৫/৭ দিন করে রিমান্ডে নির্যাতন করা হচ্ছে। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে। তাদেরকে নির্মমভাবে চোখ ও হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের নিরন্তর চেষ্টা চলছে।
তারা আদালতকে অবহিত করেছে। তারপরেও আদালত সরকার প্রধানের ইশারায় তাদের রিমান্ড অব্যাহত রেখেছে। তাদের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত, তাদের ওপর চলমান নির্যাতনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয়ে গেলে এর দায় সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে। জেলখানার ভিতরেও নেতাকর্মীদেরকে নির্মম নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছে যা অত্যন্ত অমানবিক এবং আইনের পরিপন্থি। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন মানবতা বিরোধী অপরাধ।
খুলনা গেজেট/এমএম