গত এক দশকে ভারতে প্রবেশের সময় বহু রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের একটি বড় অংশই বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত যায়। গত মাসে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরায় রোহিঙ্গাদের দুটি দলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু এই রোহিঙ্গারা উল্টো ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরছিল। এতোদিন তারা ভারতেই ছিল।
২৯শে মে তিনটি রোহিঙ্গা পরিবারকে গ্রেপ্তারের পর আসামের সিলচর বন্দীশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পরিবারগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। জানা গেছে, ২০১২ সালে তারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে থাকলেও পরবর্তীতে তারা উত্তর ভারতের জম্মুতে চলে যায়। জম্মুতে বিভিন্ন সময়েই অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আসামের পুলিশ দ্য ডিপ্লোম্যাটকে জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে রোহিঙ্গাদের এই দলটি জম্মুর একটি শরনার্থী শিবিরে ছিল।
কিন্তু তারা এখন বাংলাদেশে ফিরতে চায়। এর আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসতো কিন্তু এবার তারা উল্টো ফেরত যাচ্ছে।
৩রা মে ২৪ রোহিঙ্গার আরেকটি দলকে গ্রেপ্তার করে ত্রিপুরা পুলিশ। তারাও কৈলাশাহার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। তদন্তের পর জানা যায় এই রোহিঙ্গারাও জম্মু থেকে বাংলাদেশে ফিরছিল। শুধু ভারতেই নয়, বাংলাদেশেও ভারত থেকে ফেরা রোহিঙ্গারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। গত ১২ই মে বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে রোহিঙ্গাদের একটি দলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে ফেরার চেষ্টা করছিল। গত ২৪শে মে ক্যাম্প-২৬ থেকে সাত রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর একদিন আগেই তারা ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে কুতুপালং-এর ইউনএইচসিআর ট্রানজিট সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু হঠাৎ করে কী হলো যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ফিরে আসছে? বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিল্লিতে থাকা এক রোহিঙ্গা জানান, গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জম্মুতে থাকা রোহিঙ্গারা। এরইমধ্যে দুই হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন রুটে বাংলাদেশে পৌঁছেছেও। মূলত ভারত সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার কারণেই এটি হচ্ছে। ভারত রোহিঙ্গাদের বন্দীশিবিরে নিতে চাইছে এবং এরপর মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশের অবস্থাও ভাল নয় কিন্তু তারা অন্তত রোহিঙ্গাদের বন্দী করে রাখছে না।
ওই রোহিঙ্গা হাসিনা বেগম নামের একজনের উদাহরণ দেন। বলেন, হাসিনা বেগম প্রায় এক বছর ভারতের জেলে আটক ছিল। তাকে তার স্বামী ও তিন সন্তানের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। গত মাসে তাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। জাফর আলম নামের আরেক রোহিঙ্গাকেও সম্প্রতি মিয়ানমারে ফেরত দেয়া হয়েছে। গত বছরের শেষ দিক থেকে জম্মুতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একশন নিতে শুরু করে পুলিশ। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হয়েছে সেখানে। ফলে গ্রেপ্তার এবং মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আতঙ্কে ভুগছে ভারতে যাওয়া রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা পালাতে শুরু করে মূলত ১৯৭০ সালের পর থেকে। সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে রোহিঙ্গাদের বড় একটি গ্রুপ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা। কিন্তু ২০১৭ সালে সামরিক জান্তা রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করলে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সে সময় প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতেও প্রবেশ করেছিল। এরমধ্যে আনুমানিক ৫ হাজার জম্মুতে আশ্রয় নেয়।
খুলন গেজেট/ এস আই