খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

হজরত ইউসুফ আ.-কে যে সৌন্দর্য দিয়েছিলেন আল্লাহ তায়ালা

গেজেট ডেস্ক 

ইউসুফ আ. সুদর্শন নবীদের একজন। তাঁর সৌন্দর্য প্রবাদতুল্য। তাঁর সৌন্দর্যে সবাই বিমোহিত হয়ে পড়তো। আল্লাহ তায়ালা তাকে পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্য দান করেছেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর সাথে সাক্ষাতের পর দেখলাম যে, আল্লাহ তায়ালা সমগ্র বিশ্বের রূপ-সৌন্দর্যের অর্ধেক তাকে দান করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৬২)

অপর হাদিসে হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, ‘ইউসুফ আ. ও তাঁর মাকে পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হয়েছে।’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ৪০৮২)

অপর এক হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, ‘ইউসুফ আ. ও তাঁর মাকে পৃথিবীর যাবতীয় সৌন্দর্যের তিন ভাগের এক ভাগ দান করা হয়েছে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৬৫২৩)

ইউসুফ আ.-এর সৌন্দর্য দেখে যেকেউ মুগ্ধ হয়ে যেতেন। আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত সৌন্দর্যের কারণে তাকে জীবনে বেশকিছু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রথমটিই ছিল নিজের ভাইদের কাছ থেকে। সৌন্দর্য ও ভাইদের মাঝে ছোট হওয়ায় বাবা ইয়াকুব আ. ইউসুফকে কিছুটা বেশি স্নেহ করতেন। এ কারণে ভাইদের চক্রান্তের মুখে বাবার কাছ থেকে দূরে চলে আসতে হয় তাকে।

পরিবার থেকে দূরে মিশরের তৎকালীন অর্থ ও রাজস্বমন্ত্রী ক্বিৎফীর বাসায় লালিত-পালিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও বিশাল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে। পরিণত বয়সে তার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন সেই মন্ত্রীর স্ত্রী জুলায়খা। এবং তাঁর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইউসুফ আ. আল্লাহর ভয়ে তার আহ্বানে সাড়া দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হলে জুলায়খার বিষয়ে রাজপাড়া ও মহল্লায় গুঞ্জন শুরু হয়। জুলায়খা যে ইউসুফ আ.-এর সৌন্দর্যের সামনে আকৃষ্ট হয়ে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা তিনি সবাইকে বুঝাতে চাইলেন। এজন্য তিনি এলাকার সব নারীদের তার বাড়িতে দাওয়াত দিলেন এবং তাদের জন্য ভোজসভার আয়োজন করলেন।

নির্দিষ্ট সময়ে আমন্ত্রিত অতিথিরা জুলায়খার বাসায় এলেণ। খাবার, ফল রেডি করে তাদের সামনে রাখা হলো। ফল ইত্যাদি কেটে খাওয়ার জন্য তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে চাকু-ছুরি দিলেন জুলায়খা। এরপর তিনি ইউসুফ আ.-কে বললেন, ‘তাদের সামনে বের হও।’

ইউসুফ আ. যখন বের হলেন, তখন তাঁকে দেখে আমন্ত্রিত নারীরা অভিভূত হয়ে পড়েন। তাঁর সৌন্দর্যে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। ইউসুফ আ.-এর সৌন্দর্য দেখে আমন্ত্রিত নারীরা বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করেন। তাঁরা বলতে থাকেন : ‘আশ্চর্য আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়—এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা।’

ইউসুফ আ.-এর সৌন্দর্যে তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। ফল কাটার জন্য ছুরি দেওয়া হয়েছিল তারা এতে ফল কাটার পরিবর্তে নিজেদের হাত কেটে ফেললেন। পবিত্র কোরআনে ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে—

فَلَمَّا سَمِعَتۡ بِمَكۡرِهِنَّ اَرۡسَلَتۡ اِلَیۡهِنَّ وَ اَعۡتَدَتۡ لَهُنَّ مُتَّكَاً وَّ اٰتَتۡ كُلَّ وَاحِدَۃٍ مِّنۡهُنَّ سِكِّیۡنًا وَّ قَالَتِ اخۡرُجۡ عَلَیۡهِنَّ ۚ فَلَمَّا رَاَیۡنَهٗۤ اَكۡبَرۡنَهٗ وَ قَطَّعۡنَ اَیۡدِیَهُنَّ وَ قُلۡنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا هٰذَا بَشَرًا ؕ اِنۡ هٰذَاۤ اِلَّا مَلَكٌ كَرِیۡمٌ ﴿۳۱﴾

অতঃপর যখন সে তাদের কূটকৌশলের কথা শুনতে পেল, তখন তাদেরকে ডেকে পাঠাল এবং তাদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, আর তাদের প্রত্যেককে একটি করে ছুরি প্রদান করল এবং ইউসুফকে বলল, ‘তাদের সামনে বেরিয়ে আস’। অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তাকে বিশাল সৌন্দর্যের অধিকারী মনে করল এবং তারা নিজদের হাত কেটে ফেলল আর বলল, ‘মহিমা আল্লাহর, এতো মানুষ নয়। এ তো এক সম্মানিত ফেরেশতা’। (সূরা ইউসুফ, আয়াত : ৩১)

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!