১.
স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধা আমার গ্রামের শৈশবস্মৃতি, প্রকৃতি
কতো যে মধুর, নয়নমুগ্ধকর।
আমার সবুজ গাঁয়ের প্রাণশীতলবায়ু, পুষ্পবীথিকা,
নতুন জেগে উঠা চর বনাঞ্চল, প্রতিচ্ছবি কতো যে মনোহর ।
মায়াবী জোৎস্নায় হাস্যজ্জ্বল স্নিগ্ধ-ঊষার রঙিন অধর ।
শৈশবের হাডুডু, ফুটবল খেলার স্মৃতি কতো যে স্বপ্নময়,
অদম্য সাহসে, মনের শক্তি সঞ্চয়, আকাঙ্ক্ষার বলয় ।
শীতের সকাল-সন্ধ্যায় কুয়াশায় ঢাকা, বাড়ীর উঠোনে,
উনুনজ্বলা, রান্নাবান্নার সামগ্রী সাজানো গৃহাঙ্গন,
-উন্মুক্ত পাকঘর ।
নিশীতে, রাত জাগা পিঠা পুলির আয়োজন – মেলায় অনেক
আগ্রহ মিটেছে হৃদয়ে, কতো আনন্দ কোলাহলে ।
গাছের ডালে ঘুঘু ডাকা-সন্ধ্যা কালে, ভোরের বেলা
কোকিল ডাকা আমকাঁঠালের বনে, সুর ও স্বরধ্বনি বাজে
সুমধুর কানে, কানে । হৃদয় মাতে হাওয়ার তালে, বাঁশবনে, নতুন নিক্কনে ।
ভালোবাসার উষ্ণ আবেগ, অনলে, কৃষ্ণচূড়ার লালে লালে –
সবুজ প্রকৃতির প্রেম-অন্তর টলমলে ।
মুক্তার শীতল পাটিতে বসে নেই বিশ্রাম বাতায়ন খুলে শান্তি
– সুখের মায়াজালে । ভাইবোন মিলে ।
২.
বড় পুকুরে ফুটিছে পদ্ম, মলদীঘি আঙিনায় কাদামাটি
হাঁটুজলে । ধলেশ্বর বিলে ফুটিছে শতদল
স্নিগ্ধ সুবাসিত ঘ্রানে, ফুটিছে বউসন বিলে, শুভ্র কমল,
– শাপলা শালুকের ফুলদল !
গোলাপ, বেলীর গন্ধমাখা শৈশবের স্মৃতি যেনো বুকভরা
-প্রেম, প্রবাহ অনল । পড়াশুনার আগ্রহে কমতি নেই, মনে অতিবল ।
প্রকৃতির সবুজাভ বনছায়ায় আম বাগান, বটবৃক্ষছায়া,
– সুশীতল ।
বাড়ীর সামনে কড়ুইতলা, তালগাছ প্রবাসী পাখিদের
সুন্দর আবাস । বনতল, বনজঙ্গল ।
শীতের মৌসুমে আমার গ্রামের মানুষে; ‘বিলে মাছধরা
– আনন্দ বিলাস ।’ রাত জাগা মাছুয়া দলের মিলনের কৌতূহল ।
উর্বর বীজ বালুকায়, বেলে দোআঁশ মাটিতে ফলে
সোনার শস্য ফসল, গোলাভরা, পাট, ধানে, কৃষানের
– হৃদয়ে আনন্দ ঝলমল ।
উত্তরে গারো পাহাড়, সুন্দর শ্যামলিমা সবুজ প্রকৃতি
বাতাস নির্মল । ইতিহাসের কথায়, সাহিত্য পাতায়
ময়মনসিংহ গীতিকায় – মহুয়া-মলুয়ার প্রেমগীতি, আবেগ
– বাসনা প্রীতি, অনেক স্মৃতি, কৌতূহলে ।
বঙ্গ বীরাঙ্গনার শোকে কেল্লাতাজপুরের মাঠ আজও
কাঁদিছে সখিনার বিরহ-বিলাপ অনলে । কতো স্মৃতি !
– কবরের শোভায় আজ ফোটে গোলাপ, বেলী, চামেলী
পুষ্প কুঁড়ি-, কলি হৃদয়ের অশ্রুজ্বালা বুকের নীরলে ।
কেটেছে গ্রামের সেই শৈশব, মাটির মায়ায়
মাতৃ পিতৃ স্নেহের আবদ্ধ মায়াজালে ।