কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা কৃষক নেতা সাইফুল্লাহ্ লস্করের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল ৫ ডিসেম্বর (শনিবার)। ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ভোর রাত ৩ টার দিকে অজ্ঞাতনামা দূর্বৃত্ত কর্তৃক তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
এদিকে সাইফুল্লাহ লস্করের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষক সংগ্রাম সমিতি শনিবার সকাল ১০টায় মরহুমের কবর জিয়ারত ও বিকাল ৩টায় তালা উপজেলার ডাক বাংলো চত্বরে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে। সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতি, ভূমিহীন উন্নয়ন সমিতি ও নাগরিক সমাজ মরহুমের কবর জিয়ারতসহ বিভিন্ন স্থানে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ শনিবার সকালে মরহুমের মাজার জিয়ারত করবেন।
এদিকে শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে প্রয়াত সাইফুল্লাহ লস্করের অসুস্থ স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী সাইফুল্লাহ লস্কর ছিলেন খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আন্দোলনের নেতা। তিনি তার জীবদ্দশায় শুধু ভূমিহীনদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের অধিকার আন্দোলনে কাজ করে গেছেন। কৃষকের সার, ডিজেল ন্যায্য মূল্যে পাওয়ার অধিকার ও উৎপাদিত পাট, ধানসহ কৃষি পণ্যের ন্যয্য মূল্য প্রাপ্তির দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন। এ কারণে ভূমিদস্যু, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের একাংশ তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল। এরই জের ধরে ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ভোর রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাড়ির বাইরে নিয়ে তাকে হাত, পা ভেঙ্গে শ্বাসরোধ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। স্বামীর হত্যাকারিরা কোনদিনও শাস্তি পাবে এটা আমি কখনো মনে করি না। তাই যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন স্মৃতিচারণ করা ছাড়া আর উপায় কি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গতঃ ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ভোর রাত তিনটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির প্রশিক্ষণরত উপপরিদর্শক (টিএসআই) নজরুল ইসলাম ও সিপাহী শাহজালাল (কংনং-২৪৮) কৃষক সংগ্রাম সমিতির সহ-সভাপতি ও জেলা ভূমিহীন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সাইফুল্লাহ লস্করকে কাটিয়া লস্করপাড়ার তার নিজ বাড়ি থেকে বাইরে ডেকে আনেন। পরে ভোরে আকবর লস্করের বাড়ির পুকুর পাড়ে কাঠ ও বিছালী রাখা ঘরের মধ্যে সাইফুল্লাহ লস্করের লাশ পাওয়া যায়। নিহতের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহৃ ছিল। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের তৎকালিন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মধুসূধন মন্ডল ময়না তদন্তে সাইফুল্লাহ লস্করকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দেন।
এ ঘটনায় সদর থানার উপপরিদর্শক মনোয়ারা খাতুন ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (৯২/২০০৯নং) করেন। মামলার তদন্তভার সদর থানার উপপরিদর্শক আব্দুস সবুরের (বর্তমানে প্রয়াত) উপর ন্যস্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর রাতে জেলা জাপা নেতা ও ভূমিহীনদের পৃষ্টপোষক এড. আব্দুর রহিমকে আহবায়ক ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা শাখার সম্পাদক বর্তমানে সাংসদ অ্যাড. মুস্তাফা লুৎফুল্লাহকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যার বিচার বাস্তবায়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।
পরে এড. আব্দুর রহিম, এড. মুস্তাফা লুৎফুল্লাহসহ কয়েকজন আইনজীবী পরামর্শ করে এজাহার লিখলেও নিহতের স্বজনরা পরে তা কাট ছাট করেন। নিহতের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার বাদি হয়ে কাটছাট করা এজাহারটি ৬ ডিসেম্বর থানায় জমা দিলে তা হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের ৬ জুলাই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এড. নিজাম উদ্দিন বলেন, ময়না তদন্তে কোন ব্যক্তির অস্বাবাভিক মৃত্যূর কথা উল্লেখ করলে সেই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সূযোগ নেই। গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরণের হত্যাসহ সকল হত্যার বিচার হওয়া উচিত। তবে বিচার পেতে হলে বিচার কার্যক্রমের সঙ্গে সকলের আন্তরিক হতে হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম