খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

স্বাধীনতার ঊষালগ্নে গণমাধ্যমের পাতায় খুলনার রণাঙ্গণ

কাজী মোতাহার রহমান

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নবম সেক্টরের বিভিন্ন এলাকা চূড়ান্ত আক্রমণের পরিকল্পনায় সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এমএজি ওসমানী ও সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা। ছবি মোহাম্মদ আলম
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নবম সেক্টরের বিভিন্ন এলাকা চূড়ান্ত আক্রমণের পরিকল্পনায় সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এমএজি ওসমানী ও সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা। ছবি মোহাম্মদ আলম

একাত্তরের ২৪ অক্টোবর মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাতায় খুলনার রণাঙ্গনের নানা প্রতিবেদন ছাপা হয়। বিপ্লবী বাংলাদেশের প্রতিবেদনের শিরোনামে ছিল ’খুলনার চাউলা হাসানের লঞ্চ হাইজ্যাক’। তিনি খুলনা পৌরসভার এক সময়কার ভাইস চেয়ারম্যান। হোটেল শাহিনের মালিক। শহর মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি শান্তি কমিটির অন্যতম উদ্যেক্তা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “দুঃসাহসিক মুক্তিযোদ্ধার খুলনার ‘চাউলা হাচানের’ বিউটি অব খুলনা নামক লঞ্চখানা কোনো এক গ্রাম থেকে হাইজ্যাক করে মুক্তাঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া খুলনার দুই জন কুখ্যাত মুসলিম লীগ দালালকে বন্দী করে নিয়ে এসেছেন। দালাল দু’জন বন্দী হওয়ায় স্থানীয় গ্রামের জনগণ এত দিনের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেল। এ জন্য জনগণ মুক্তিবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দালাল দু’জন লঞ্চযোগে খুলনায় যাচ্ছিল রাজাকার এবং পাক সেনাদের নিয়ে আসতে। এই সংবাদ পেয়ে একদল মুক্তিবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে এই সাফল্য অর্জন করে।”

৯ অক্টোবর খুলনার বাগেরহাট মহাকুমায় পাকসেনারা মুক্তিবাহিনী দ্বারা আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয় এবং এই বীরত্বপূর্ণ আক্রমণে একজন অফিসারসহ ১০ জন পাক আক্রমণকারী শত্রু সেনা নিহত এবং অনেকেই গুরুতর আহত হয়। মুক্তিবাহিনী এখান থেকে অনেক অস্ত্র-শস্ত্র দখল করেন।

খুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হানাদারবাহিনী নাস্তানাবুদ
একাত্তরের ২ নভেম্বর বাংলার বাণীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলার অগ্নিসন্তান মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জলাঞ্চল ফরিদপুর, বরিশাল এবং খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের গেরিলা তৎপরতা জোরদার করেছে।

গত ১৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা জেলার চালনা বন্দরের পশুর নদীতে লালসিয়া নামক একটি বড় জাহাজ এবং একটি বার্জ ডুবিয়ে দিয়ে জঙ্গী শাসকদের মনে আতংকের সৃষ্টি করেছেন। এ জাহাজটি খুলনা নিউজপ্রিন্ট কারখানার জন্য সুন্দরবন এলাকা হতে কাঁচামাল সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হইত। ইদানিং এটি খান সেনাদের চলাচলের জন্যও সরবরাহ করা হত বলে জানা যায়।”

“গত ২৩ অক্টোবর স্বাধীনতা সংগ্রামীরা খুলনা জেলায় আশাশুনি এলাকায় একটি রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে ৬৪ জন রাজাকার খতম এবং ৪০ জনকে মারাত্মকভাবে জখম করে। এই সময় তাহারা ৫টি রাইফেলও দখল করেন। একইদিনে তারা খুলনা জেলার পাটকেলঘাটায় হানাদার বাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া ১৫ জন খান সেনা খতম করেন। এ ছাড়া তারা খুলনার শ্যামনগর এবং ভাতশালা এলাকায় খান সেনাদের ওপর পৃথক আক্রমণ চালিায়ে এগারো জন দস্যুসেনা খতম করেন।”

ব্রিটিশ জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত
একাত্তরের ১৪ নভেম্বর বিপ্লবী বাংলাদেশের প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশের গেরিলারা চালনা বন্দরে একখানা ব্রিটিশ জাহাজের ওপর গুলিবর্ষণ করলে জাহাজটি চালনা ছেড়ে পালিয়ে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছে। জাহাজটির প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। জাহাজটির নাম ‘সিটি অব সেন্ট আলবানাস’। জাহাজটি গত বুধবার দিন কলকাতা থেকে খুলনার চালনা বন্দরে এসেছিল পাট নিয়ে বিদেশে যাবে বলে। জাহাজটি চালনা বন্দর ছেড়ে কলকাতায় আশ্রয় নিলে সেখানে অবস্থানরত অন্যান্য বিদেশী জাহাজগুলো বাংলাদেশে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

২০ জন শত্রু সেনা নিহত
খুলনার শ্যামনগর থানার কৈখালী নামকস্থানে মুুক্তিবাহিনীর সাথে পাক সেনাদের এক সংঘর্ষ ঘটলে দু’জন পাকসেনাসহ ৬ জন রাজাকার নিহত হয় এবং বেশকিছু সংখ্যক পাক সেনা জখম হয়। মোল্লাহাট থানার চারকুলিয়া গ্রামের সন্নিকটে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালালে ক্যাপ্টেন সেলিমসহ বারোজন হানাদার নিহত হয়।

 

খুলনা গেজেট / কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!