রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি—প্রথম ঘণ্টায় তিনজনকে ফিরিয়ে ভারতের টপ অর্ডার কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। দ্বিতীয় সেশনেও ধরে রেখছিলেন সেই ছন্দ। কিন্তু এমন স্বপ্নময় শুরুর পর দিন শেষে হতাশাই সঙ্গী হলো বাংলাদেশের। সপ্তম উইকেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার ১৯৫ রানের জুটিতে বাংলাদেশের আশা মাড়িয়ে চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনটা নিজেদের করে নিল ভারত।
চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিন শেষে স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান তুলেছে ভারত। দিন শেষে ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তার সঙ্গে ৮৬ রানে ব্যাট করছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা।
কদিন আগে পাকিস্তানে সিরিজ জয়ের স্মৃতি এখনও চকচকে। সেই সুখস্মৃতি নিয়ে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে মাঠে নামে বাংলাদেশ। এম চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে ভারত সফরের প্রথম ম্যাচেই টস ভাগ্য জিতে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টস জিতে তিনি নেন সাহসী সিদ্ধান্ত, বেছে নেন বোলিং। যেটা চিপকের ইতিহাসে ৩৫ টেস্টের মধ্যে মাত্র দ্বিতীয়বার টস জিতে বোলিং নেওয়ার ঘটনা।
আগে বোলিং নিয়ে যে ভুল করেননি শান্ত সেটা প্রমাণ মিলল শুরুতেই। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে হাসান মাহমুদের হাত ধরে এসে যায় সাফল্য। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে একটু বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি মোকাবিলায় স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত শর্মা। সেখানে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত ক্যাচ লুফে নিয়ে ভাসেন উচ্ছ্বাসে। ১৯ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় ভারত অধিনায়ককে।
হাসানের পরের শিকার শুভমান গিল। নিজের পরের ওভারে কট বিহাইন্ড করে বিদায় করেন গিলকে। রানের খাতাও খুলতে পারেননি ভারতের এই টপ অর্ডার।
জোড়া উইকেট নেওয়া হাসান প্রথম ঘণ্টাতেই আরেকবার হতাশায় ডোবান ভারতকে। তৃতীয় শিকার বানিয়ে বিদায় করেন বিরাট কোহলিকে। চারে নামা কোহলি উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। দশম ওভারে এসে সেই চেষ্টা বৃথা করে দেন হাসান।
বাংলাদেশি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন কোহলি। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় কিপার লিটন দাসের হাতে।
প্রথম সেশনে ২৩ ওভারে ৮৮ রান তুলতে তিন টপ অর্ডারকে হারিয়ে ফেলে ভারত। দ্বিতীয় সেশনে নেমে এই হতাশার মাঝে আবার ধাক্কা দেন হাসান। লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরেই নিজের চতুর্থ শিকার বানান রিশাভ পন্থকে। ২১ মাস পর টেস্টে ফেরা পন্থ ভারতের হাল ধরার চেষ্টায় ছিলেন। উইকেটে প্রায় থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক ৩৯ রানের মাথায় তার প্রতিরোধ ভেঙে আরেকবার উল্লাসে ভাসেন হাসেন।
দ্বিতীয় সেশনে হাসানের সঙ্গে উইকেট উৎসবে যোগ দেন নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ। নাহিদের গতির কাছে পরাস্থ হয়ে ফিরেন জয়সওয়াল। হাফসেঞ্চুরির পর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। নাহিদের ১৪৮ কিমি প্রতি ঘণ্টার শর্ট ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে প্রথম স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন ভারতীয় ওপেনার। ১১৮ বল খেলে ৫৬ রানে থামে তার ইনিংস।
পরের শিকার মিরাজের। দুই পেসারের মাঝে স্পিনার মিরাজ তুলে নেন লোকেশ রাহুলের উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে ৮৮ রানের বিনিময়ে আরও তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে এই সেশনটাও রাঙায় বাংলাদেশ।
কিন্তু প্রথম দুই সেশনের রঙিন উৎসব তৃতীয় সেশনে রূপ নেয় হতাশায়। এই সেশনের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলার ওপর ছড়ি ঘোরান অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। ভারতের চাপ সামলে দুজন মিলে সপ্তম উইকেটে উপহার দেন দুর্দান্ত জুটি। দুজনেই খেলেন ওয়ানডে স্টাইলে। ১০৮ বল খেলে দিনের শেষ দিকে ক্যারেয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট শতক তুলে নেন অশ্বিন। জাদেজা শতকের কাছে থেকে দিন শেষ করেন। এই জুটিতে চড়ে দিনের প্রথম দুই সেশনের হতাশা মাড়িয়ে স্বস্তি নিয়ে দিন শেষে করে ভারত।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৫৮ রান দিয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। ৮০ রান খরচায় নাহিদের শিকার একটি। মিরাজ ৭৭ রান দিয়ে নেন এক উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস (প্রথম দিন শেষে) : ৮০ ওভারে ৩৩৯/৬* (জাইসওয়াল ৫৬, রোহিত ৬, গিল ০, কোহলি ৬, পন্ত ৩৯, রাহুল ১৬, জাদেজা ৮৬*, অশ্বিন ১০২* ; তাসকিন ১৫-১-৪৭-০, হাসান ১৮-৪-৫৮-৪, নাহিদ ১৭-২-৮০-১, মিরাজ ২১-২-৭৭-১, সাকিব ৮-০-৫০-০, মুমিনুল ১-০-৪-০)
খুলনা গেজেট/এমএম