অহংকার আর গর্বের নাম পদ্মা সেতু। রাজধানীর সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মেলবন্ধন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। একটিমাত্র সেতুর জন্য পাল্টে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতি। গড়ে উঠবে বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক জোন, নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। এই অঞ্চলের উৎপাদিত ফসল ও মাছ দ্রুত পৌছাবে রাজধানীতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে, বাঁচবে সময়। এমন একটি স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা জাতি। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও বহু কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়, সত্যি। এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে, তবে সেতুতে ছুটতে অপেক্ষা মাত্র। শনিবার (২৫ জুন) এই সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরেরদিন সকাল ৬ টায় সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে প্রমত্তা পদ্মার ওপর নির্মিত এ সেতু।
শনিবার মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচনের পর সেতু পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী যাবেন জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজায়। সেখানে কয়েকটি স্থাপনার উদ্বোধন করে যাবেন শিবচরের কাঁঠালবাড়িতে জনসভায়। এ উপলক্ষে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, প্রস্তুত জাজিরা প্রান্ত।
জানা গেছে, পদ্মাসেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাওয়া প্রান্ত ও মাওয়া সংলগ্ন উপজেলাগুলোতে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ শ্রীনগর, সিরাজদিখান, লৌহজং উপজেলার রাস্তাঘাট ও অলিগলি। এক্সপ্রেসওয়ের পাশের টংগিবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা গেছে। শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় রাস্তার পাশে শোভা পাচ্ছে বড় বড় বিলবোর্ড ফেস্টুন ও ব্যানার। শিমুলিয়া ঘাটে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়েজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের পাশেও বড় বড় ব্যানার ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে।
শুধু পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তই নয়, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সেতু উদ্বোধনের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে খুলনায় শনিবার দিনভর নানা আয়োজনের সঙ্গে রাতে জেলা স্টেডিয়ামে থাকছে আতশবাজি এবং নান্দনিক লেজার-শো।
খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি বড় পর্দায় খুলনা জেলা স্টেডিয়াম, দৌলতপুর ও শিববাড়ি এলাকায় প্রদর্শন করা হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দবার্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুইটি সুসজ্জিত প্রচার ভ্যানে পদ্মা সেতু উপর নির্মিত থিম সং এবং পদ্মা সেতু প্রমোশনাল অডিও সম্প্রচার করা হচ্ছে।
খুলনাকে আলোয় উদ্ভাসিত করতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় থাকছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। পদ্মা সেতুকে উপজীব্য করে নির্মিত বিশেষ ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন এবং ডাক বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে এলইডি স্ক্রিনে।
সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় টোলপ্লাজা। দক্ষিণের ২১ জেলার যানবাহন জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজায় টোল পরিশোধ করে সেতুতে উঠবে। জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজার সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। তার পাশে ফোয়ারা, এর ওপর ইলিশের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।
খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক জানান, পদ্মা সেতুর সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে খুলনার মানুষ। এজন্য উদ্বোধনের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে খুলনা মহানগরীকে সাজানো হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। নগর ভবনসহ কেসিসির সব স্থাপনা এবং সড়কে আলোজসজ্জা করা হয়েছে। অন্যান্য সরকারিদপ্তর নিজ উদ্যোগে আলোকসজ্জা করেছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের অনন্য ইতিহাস ও উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাহেন্দ্রক্ষণের সঙ্গে সকলকে সম্পৃক্ত করতে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচারসহ বিকেল ৪টায় জেলা স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পটের গান, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ব্যান্ড দল ‘চিরকুট’ এবং ‘বাউল’-এর সংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, আমাদের স্বপ্নের সেতু পদ্মা। এই সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল এবং খুলনা বিভাগে যাতায়াতের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হবে। চিংড়ি এবং মাছের অবারিত সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হবে। কারণ মাছ যখন জীবন্ত বাজারে নিয়ে যেতে পারবে, তখন মূল্যটা আরও বেশি পাবে। খুলনা থেকে প্রতিদিন হিমায়িত ও বরফায়িত মাছ ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মার্কেটে নিয়ে যেত। এখন ৪-৫ ঘণ্টায় ফ্রেস মাছ নিয়ে যেতে পারব। এক্ষেত্রে আমি মনে করি চাষিরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। যেহেতু খুলনা চিংড়ি, মাছসমৃদ্ধ অঞ্চল, এই অঞ্চলে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে। পদ্মা সেতু হওয়াতে মৎস্য সেক্টর সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে আমার মনে হয়।
খুলনা গেজেট /এমএম