মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে খুলনার ৯ উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন ৯২২ টি পরিবার নান্দনিক ঘর পাচ্ছেন। যাদের জমি এবং বাড়ি কোন কিছুই নেই তাদেরকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ২ শতাংশ খাস জমির বন্দোবস্ত সহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা একটি আশ্রয়স্থল তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে সরকার ‘ক’ ক্যাটাগরিতে যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন তাদের এবং ‘খ’ ক্যাটাগরিতে যাদের ভূমি আছে কিন্তু গৃহ নেই তাদের নতুন ঘর তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। খুলনার ৯টি উপজেলা থেকে ‘ক’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত ভূমিহীন এবং গৃহহীন ৫০৮৮ টি পরিবারের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। প্রথমপর্যায়ে ৯২২টি পরিবারকে জমি ও ঘর নির্মাণ করে দিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রূপসা উপজেলায় ৭২টি, তেরখাদায় ৪০টি, দিঘলিয়ায় ৭০টি, ফুলতলায় ৪০টি, ডুমুরিয়ায় ১৪০টি, বটিয়াঘাটায় ১৫০টি, দাকোপে ১৪০টি, পাইকগাছায় ২২০টি ও কয়রায় ৫০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প আশ্রয়ণ-২-এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে কমপক্ষে দুই শতক খাস জমির বন্দোবস্তসহ দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার এসব কাজ চলমান রয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারীর মধ্যে এসব গৃহের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী জেলা প্রশাসন। সরকারের মহতি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে স্ব স্ব উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সরকারি ভূমি উদ্ধার ও ঘরের স্থান নির্ধারণসহ এসব ঘর নির্মাণে তদারকির জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উপজেলাগুলোর ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জিয়াউর রহমান, স্থানীয় সরকার দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইকবল হোসেনসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা ঘর তৈরি কার্যক্রম ও অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শন এবং সুবিধাভোগীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। ইতিমধ্যে রূপসা উপজেলায় নির্মানাধীন ঘর সরেজমিন পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১৩ (পরিবহণ) মেজর মোঃ ফরিদুল ইসলাম (পিএসসি)। স্থানীয় প্রশাসনের নিবীড় তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠছে আশ্রয়হীন মানুষের এসব স্বপ্নের ঠিকানা। গৃহহীনরা তাদের স্বপ্নের পূর্ণতা পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
প্রতিটি গৃহনির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সে হিসেবে ঘর নির্মাণে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। প্রতিটি গৃহে ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা থাকবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ছিন্নমূল ও ভূমিহীন পরিবারের তথ্য স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে যাচাই করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ‘ক’ শ্রেণির ৫০৮৮ টি পরিবারের মধ্যে প্রথমপর্যায়ে ৯২২ টি পরিবারের জন্য তৈরিকৃত ঘরের কাজ আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জিয়াউর রহমান। আর বাকিদের অনুমোদন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে সরকারি ঘর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি খুলনা গেজেটকে জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আরও জানান, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছে তাদেরকে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। খুলনা জেলায় ৯২২টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গুণগতমান যথাযথ বজায় রেখে দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরগুলোর নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।” তিনি বলেন, “মনিটরিংয়ের জন্য জেলা পর্যায়ের কমিটির পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হচ্ছে। একই সাথে যারা উপকারভোগী আছে তাদের সাথেও মতবিনিময় করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গৃহহীনদের একটা মানসম্মত ও টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য আমরা সর্বক্ষণ তদারকি করে যাচ্ছি।”
রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার জানান, “কাজের গুনগত মান শত ভাগ বজায় রেখে মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার সমাজের নিম্ন আয়ের ভূমিহীন পরিবারগুলোর (প্রতিবন্ধী, হরিজন, দলিত, ভ্যান চালক) কাছে যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর এবং তাদেরকে সরকারের মাধ্যমে একটা সেরা উপহার দিতে পারলে আমরা গর্বিত।”
খুলনা গেজেট/এমএম