খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
কেরালার বিমান দুর্ঘটনা

স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে দেশের বাড়িতে ফেরা হল না শরফুদ্দীনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দুবাই থেকে বিমানে ওঠার ঠিক আগে শরফুদ্দীন সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছিলেন যে আর ঘণ্টা পাঁচেক পরেই তারা দেশে ফিরছেন। পাঁচ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাতে তাদের বিমান দেশের মাটি ছুঁল বটে, কিন্তু তার আর বাড়ি ফেরা হল না। কোঝিকোড বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ জনের মধ্যে শরফুদ্দীনও রয়েছেন।

“ওর স্ত্রী আমিনা বারবার জিজ্ঞাসা করছে স্বামীর কথা। কিন্তু আমরা কিছু জানাইনি ওকে এখনও। আমিনার দুটো হাত আর দুই পায়ে চোট আছে। সকালে ওর অপারেশন হয়েছে।

“ওদিকে ওদের আড়াই বছরের মেয়ে ফাতিমা তো কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। সকালে বাচ্চারও অপারেশন হয়েছে,” ধরা গলায় বলছিলেন আমিনার চাচা হানি হাসান।

কালিকট মেডিক্যাল কলেজে অপারেশনের পরে মেয়ের এখন সুস্থ আছে জানলেও আরেকটি হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা আমিনা এটা জানেন না যে তার স্বামী আর নেই।

যে বিমানে তারা দেশে ফিরছিলেন, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সেই বিমানে ১৮৪ জনই ফিরছিলেন দুবাই থেকে।

এদের কেউ যেমন সেখানে বেড়াতে গিয়ে মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারেননি, তেমনই অনেকে মহামারির কারণে দুবাইতে কাজ হারিয়ে মরিয়া হয়েছিলেন দেশে ফেরার জন্য।

এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস যে যাত্রী তালিকা প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণ করে বিবিসি-র স্থানীয় সংবাদদাতারা বলছেন, ২৬ জন যাত্রী ছিলেন ওই বিমানে, যারা কাজ হারিয়েছিলেন আর ২৮ জনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।

বেড়াতে গিয়ে দুবাইতে আটকা পড়েছিলেন ৫৪ জন আর ছয় জন ভারতে ফিরছিলেন চিকিৎসা করাতে। তিনজন এমন যাত্রীও ছিলেন, যারা বিয়ে করতে দেশে আসছিলেন।

শরফুদ্দীনের মতোই দেশের মাটি ছুঁয়েও বাড়ি ফেরা হয়নি কোঝিকোডের পাশের জেলা মাল্লামপুরের বাসিন্দা সুধীর বারিয়াথের।

যে ২৬ জন যাত্রী দুবাইতে কাজ হারানোর পরে অনেক চেষ্টা করে দেশে ফিরছিলেন, মি. বারিয়াথও তাদেরই একজন। ছেচলি­শ বছর-বয়সী সুধীর বারিয়াথ দুবাইতে একটি বহুজাতিক সংস্থায় অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার ছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারিতে কাজ হারান তিনি।

তার কাকা করুণাকরণ বারিয়াথ হাসপাতালের সামনে আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গেই অপেক্ষা করছিলেন ভাইপোর মৃতদেহ নেওয়ার জন্য। সেখানেই তার সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সাংবাদিক মুহম্মদ সাবিথ। কিন্তু দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের মধ্যে যে একজনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে, সুধীর বারিয়াথই সেই যাত্রী।

দুবাইতে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন, এমন একজন যাত্রী ৪৬ বছর বয়সী জয়ামোল যোসেফ নামের এক নারী। কোঝিকোডের বাসিন্দা কয়েকজন পারিবারিক বন্ধু, যারা দুবাইতে থাকেন, তাদের কাছেই গিয়েছিলেন জয়ামোল। ফেরার টিকিট ছিল মার্চের শেষ দিকে। কিন্তু তখন ভারতে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক মাস বন্ধুদের বাড়িতেই থেকে গিয়েছিলেন জয়ামোল। তাকে বিমানবন্দরে ছেড়ে আসতে সপরিবারে গিয়েছিলেন সাদিক মুহম্মদ – মিজ. যোসেফের পারিবারিক বন্ধু।

“ও ফোনটা চালু করেছিল দুর্ঘটনার ঠিক পরেই। তখনই ফোন করে খবরটা দেয়। বলছিল বিমানের চাকাটা মাটি ছুঁয়েই আবারও ওপরে উঠতে শুরু করে। সব যাত্রীরা ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ভয়ে কাঁদছিল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আবারও ল্যান্ড করে।

“কিন্তু জয়ামোল বুঝতে পেরেছিল যে বিমানটা পাহাড় থেকে নীচে পড়ে গেছে। আমাদের সৌভাগ্য যে ওর বিশেষ চোট লাগে নি। নাকে একটু চোট পেয়েছে শুধু.” বিবিসিকে বলছিলেন মি. সাদিক।

মিজ যোসেফের ফোনটা চালু হয়েছিল বলে বিমান থেকেই অনেক যাত্রী নিজেদের পরিবার পরিজনকে খবর পাঠান।

তবে ২৬ বছর বয়সী আফজাল পারা এখন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন।

বিমানযাত্রীদের তালিকায় তার নামও ছিল। দুবাইতে তার এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায় যে তিনি বিমান ধরতেই পারেন নি।

ফোনে তার এক বন্ধু শামিল মুহম্মদ জানাচ্ছিলেন, “ওর ভিসা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ৫০০ দিরহাম ফাইন করেছিল ওকে। ওর কাজ ছিল না। তাই ফাইন দিতে পারে নি। তার ফলে বিমানবন্দরে পৌঁছতেই পারে নি।”

দুর্ঘটনায় বিমানটির চালক দীপক শাঠে এবং সহ-চালক অখিলেশ শর্মাও নিহত হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন, “মি. শাঠে একজন অতি অভিজ্ঞ পাইলট ছিলেন। ১০,০০০ ঘণ্টারও বেশি বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল তার। এয়ার ইন্ডিয়ায় চাকরি নেয়ার আগে তিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ছিলেন।”

ওদিকে হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে যে সহকারি চালক অখিলেশ শর্মা যে দুর্ঘটনায় নিহত, সেকথা তার আত্মীয়রা মি. শর্মার স্ত্রীকে এখনও জানান নি।

মি. শর্মার ভাইকে উদ্ধৃত করে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে যে তার স্ত্রীর দিন পনেরোর মধ্যে সন্তানের জন্ম দেয়ার কথা। (বিবিসি বাংলা অবলম্বনে)

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!