আজ ১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে এদের মধ্যে যে শুধু যে নারীরাই রয়েছেন, তা কিন্তু নয়। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন পুরুষরাও। স্তন ক্যান্সার রুখতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিই এই দিবসের লক্ষ্য।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘স্থূলতা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।’ এই রোগে পুরুষের তুলনায় নারীর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নারীর ক্ষেত্রে বয়স চল্লিশ পার হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। আবার দৈনন্দিন জীবন-যাপনের পদ্ধতিও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এর শেষ পরিণতি মৃত্যু। তবে আগেই রোগ চিহ্নিত করতে পারলে নিরাময় করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্তন ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য হওয়ার পরেও যে অসংখ্য নারী এই অসুখের বলি হন। তার একমাত্র কারণ, স্তনের অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব বুঝতে না পারা অথবা বুঝেও উদাসীন থাকা।
এর আরো কিছু লক্ষণ আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে স্তন ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। এজন্য শুরুতেই এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এছাড়াও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধও করা যায়। এর জন্য কিছু উপায় মানতে পারেন। জেনে নিন সেগুলো-
ক্যান্সার প্রতিরোধী খাবার খান
ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবারের ভূমিকা অনেক বেশি। যে কারণে আপনার ক্যান্সারের সম্ভাবনা ৬০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। আর এই জন্য আপনাকে খেতে হবে তাজা ফল, মটরশুঁটি, ফ্ল্যাভনয়েড, আস্ত শস্য এবং ক্রুসিফেরাস ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট (যেমন ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি) ও ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ সবজিগুলো। এখানে পেঁয়াজ পাতা, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে।
তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেতে হলে এই ধরনের সবজি আপনাকে কাঁচাই খেয়ে ফেলতে হবে। সয়াবিন, সয়া প্রোটিন ও অন্য সয়া পণ্য যেমন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে তেমনি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও অনেক কমায়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে মিষ্টি জাতিও স্বাদের সয়া পণ্য যেমন সয়া তেল ও সয়া দুধ এগুলো আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। চিনি ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে যা জিনকে সক্রিয় করে তোলে। তাই মনে রাখবেন চিনি কিন্তু আপনার জীবনের চরম শত্রু কারণ সে আপনার ক্যান্সারের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীরা নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট ব্যায়াম বা ইয়োগা করেন তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ২৫-৪৫% কমে যায়। তাই অবশ্যই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় করে যেকোনো ব্যায়াম করুন। আর সেটাও সম্ভব না হলে দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করুন।
ওজন ঠিক রাখুন
বাড়তি ওজন অন্যান্য রোগের পাশাপাশি স্তন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা ডায়েট করেন না তাদের ওজন খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে দেহের স্বাভাবিক ওজন ঠিক রাখা জরুরি।
গ্রিনটি পান করুন
প্রতিদিন কমপক্ষে এক কাপ গ্রিনটি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যা আপনার ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করবে।
ভালো ফ্যাট গ্রহণ করুন
ওমেগা-৩, ভুট্টা, সূর্যমুখীর তেল এইসব ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার বা খারাপ ফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। কারণ এইসকল ফ্যাট বা বিভিন্ন ধরণের চর্বি ব্রেস্ট ক্যান্সারের উপর অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে। তাই মাছের তেল এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার খান।
ধূমপান বর্জন করুন
যেসব নারীরা ধূমপানে আসক্ত বা অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস আছে। তাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে ৩০% থেকে ৪০% এরও বেশি। তাই এই অভ্যাসগুলো থাকলে আজই পরিত্যাগ করার চেষ্টা করুন।
নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট
অনেক সময় খাবারে পরিমিত পুষ্টি, ভিটামিন ও মিনারেল নাও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। যা আপনার স্তন ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। তাই চেষ্টা করবেন পর্যাপ্ত মাত্রার ভিটামিন এ, ডি ও ই সমৃদ্ধ খাবার বাসাপ্লিমেন্ট খেতে। যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
টিপস
> রাসায়নিক সমৃদ্ধ কোনো জিনিস বা পরিষ্কারক এবং কীটনাশক ব্যবহার করা থেকে এড়িয়ে চলুন।
> প্লাস্টিক জাতিও কোনো পাত্রে খাদ্য ও পানি সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকুন।
> প্যারাবেন ও থ্যালেটযুক্ত কোনো বিউটি কেয়ার প্রোডাক্ট বা সামগ্রী ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
> আপনার বয়স ২০ থেকে ৪০ বছরের বেশি হলে প্রতি ২ বছর পর পর স্তনের পরীক্ষা করান।
> বয়স ৪০ বছরের বেশি হলে প্রতি এক বছর অন্তর অন্তর ডাক্তারের কাছে গিয়ে স্তনের পরীক্ষা ও মেমোগ্রাম করাতে হবে।
> প্রতিদিন কমপক্ষে ৪-৫ লিটার পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে রক্তের প্রবাহ সঠিক রেখে সেলগুলো মজবুত রাখবে। এতে করে অনেক বড় রোগ থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব।
খুলনা গেজেট/এনএম