প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩ জুলাই জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে স্কুলে পাঠাতে চায় সরকার। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদানের আপাতত পরিকল্পনা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
সারা দেশে এ মুহূর্তে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ। টিকা স্বল্পতার পাশাপাশি ও ১৮ বছরের নিচের জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালায় পরিষ্কার কিছু উল্লেখ না থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শিশুদের টিকা দেয়ার কথা ভাবছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ৮০ শতাংশ লোককে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত টিকা সরকারের হাতে নেই। দেশে যে চার ধরনের টিকা আসছে, সেগুলো দেয়ার তালিকায় স্কুল শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্ত করার আপাতত পরিকল্পনা নেই।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে।
এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে তারা আলোচনায় বসবেন ঈদের পর। এর মধ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে সরকারের হাতে পর্যাপ্ত টিকা চলে আসবে। দুই অধিদপ্তর বসে তখন হয়তো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও টিকা নিশ্চিত করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সুপারিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারটি কোম্পানির টিকা পেয়েছি। এগুলো হলো মর্ডানা, ফাইজার, সিনোফার্ম এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র ফাইজারের টিকা ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের ব্যবহারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন রয়েছে। তবে আমরা ফাইজারের টিকা পেয়েছি মাত্র ১ লাখ ৬ হাজার, যা আমাদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম।’
তিনি আরও বলেন, স্কুল-কলেজ খুলে দিতে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের যে টিকা দেয়া যায়, তার যোগান বাড়াতে হবে। নতুন কোনো টিকা ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের দেয়ার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয় কিনা সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, টিকা দেয়ার আগে স্কুল-কলেজ খোলা ঠিক হবে না। আমার জানা মতে, এ ধরনোর কোনো টিকা এখনও দেশে আসেনি। তবে যতটুকু খবর পাচ্ছি, আগস্ট নাগাদ দেশে পর্যাপ্ত টিকা চলে আসবে। তখন সরকার ব্যাপক পরিমাণে টিকা কার্যক্রম চালাতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় বায়োটেক কোম্পানি ভারত বায়োটেক দুই বছর বছরের বেশি বয়সীদের ব্যবহারের জন্য একটি টিকার পরীক্ষা চালাচ্ছে। এ পরীক্ষা সফল হলে সারা বিশ্বের স্কূল-কলেজের শিশুদের টিকার আওতায় আনা সহজ হবে। সে ক্ষেত্রে আমরাও উপকৃত হতে পারি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘টিকা নিশ্চিত করার পর স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি যথার্থ ও সময়োপযোগী।’
কবে নাগাদ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দেখভাল করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমাদের মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ৫ লাখ আর উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা, তাতে সাধারণত একজন শিক্ষার্থী ১৮ বছর বয়সে উচ্চমাধ্যমিক উর্ত্তীন হয়।’
গত শনিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতার সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার দাবি উঠছে। কিন্তু আসল কথা হলো, যাদের বাচ্চারা স্কুল-কলেজে যায়, তারাই কিন্তু চাচ্ছেন না এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক। যাদের ছেলেমেয়েরা যায় না, তারাই বেশি কথা বলছেন।
‘আমরা এরই মধ্যে শিক্ষকদের টিকা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদেরও দিয়ে দেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল বন্ধ আছে। কিন্তু পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়। আমরা সংসদ টিভিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের একটু ক্ষতি হচ্ছে। টিকা দিয়েই আমরা স্কুল-কলেজ খুলে দেব। লেখাপড়া শিখবে। কিন্তু জেনেশুনে এর জন্য একটি শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কি না, সেটা চিন্তা করতে হবে।’
ইতোমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ টিকা দিতে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র মো. রোবেদ আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেয়া হয়ছে। এটা ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগে দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে। তবে স্কুলের টিকা দেয়ার বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা পায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, ফাইজারের টিকা শিশুদের দেয়া যাবে বলে পরামর্শ আছে। তার বলছেন, আমেরিকা পরীক্ষামূলকভাবে শিশুদের টিকা দিচ্ছে।
সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কী ভাবছে এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, এবিষয়ে এখনও আমাদের সিদ্ধান্ত আসেনি।
খুলনা গেজেট/ টি আই