খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা
  রাজধানীর হাজারীবাগে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে আহত কিশোরের মৃত্যু

সৌদিতে খুলনার আবিরন বেগম হত্যায় গৃহকত্রীর মৃত্যুদণ্ড

আন্তর্জা‌তিক ডেস্ক

সৌদি আরবে এক বাংলাদেশি গৃহকর্মীকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গৃহকর্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড এবং গৃহকর্তাকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে দেশটির অপরাধ আদালত। মামলার প্রধান আসামী গৃহকত্রী আয়েশা আল জিজানীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত এবং সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দায়ে আদালত কেসাস বা ‘জানের বদলে জানের’ রায় প্রদান করে। আদালত এ রায় ঘোষণা করে ১৫ই ফেব্রুয়ারি।

ওই মামলায় গৃহকর্তা বাসেম সালেমের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংস, আবিরন বেগমকে নিজ বাসার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজে পাঠানো ও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার অভিযোগে মোট ৩ বছর ২ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। সেইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জমা দিতে বলা হয়েছে। মামলার তৃতীয় আসামী সৌদি দম্পতির ছেলের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকার কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে আবিরন বেগমকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করায় তাকে সাত মাস কিশোর সংশোধনাগারে থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও সৌদি আরবের রিয়াদের শ্রম কল্যাণ উইং এর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। সৌদি আরবে কোন বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় এই প্রথম কারো মৃত্যুদণ্ড হলো।

তবে আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

খুলনার পাইকগাছার বাসিন্দা আবিরন বেগম স্থানীয় এক দালালের সাহায্যে ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে।

এরপর ২০১৯ সালের ২৪শে মার্চ রিয়াদের আজিজিয়ায় তিনি নিহত হন। তার মরদেহের ফরেনসিক প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আসে। তারপরই দেশটির পুলিশ তদন্ত শুরু করে।

তবে আবিরনের মরদেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিলে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহায়তার হত্যাকাণ্ডের ৭ মাস পর ওই বছরের ১৪ই অক্টোবর তার মরদেহ দেশে ফেরানো হয়। মরদেহের সঙ্গে আসা আবিরনের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ “হত্যা” কথাটি লেখা ছিল।

পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিহতের পরিবার, নিয়োগকারী সংস্থা, মন্ত্রণালয়, দূতাবাস সব জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে ডিসেম্বরে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকেই মধ্যবয়সী আবিরনকে পিটিয়ে, গরম পানিতে ঝলসে এবং আরও নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। সাত মাস সেখানকার এক মর্গে আবিরনের লাশ পড়ে ছিল।

প্রতিবেদনে এদেশের অভিযুক্তদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করা হয়। এরপর নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় আবিরন হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ। আবিরনের মৃত্যুতে সৌদি আরবের আদালত দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

গত ৬ই জানুয়ারি এই মামলার সবশেষ শুনানি ছিল। এ সময় আদালত নিহতের পরিবারের দাবি জানতে চাইলে দূতাবাস প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন যে তারা কেসাস চান।

আসামীপক্ষের আইনজীবী গৃহকর্তা বাসেম সালেমির জামিনের আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে দেয়।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে ৫ শতাধিক নারী শ্রমিকের অপমৃত্যু। যার বেশিরভাগই হয়েছে সৌদি আরবে। কিন্তু এসব অপমৃত্যুর ঘটনার কোনটি আদালত পর্যন্ত গড়ায় না। এবারই প্রথমবারের মতো কোন বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় রায় এলো।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!