আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের ভেন্যু নিয়ে অনেক আলোচনার মধ্যেও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে এখন পর্যন্ত অটল বিএনপি।
রোববার সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নয়াপল্টনেই ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা অন্য কোথাও সমাবেশের কথা ভাবছি না। সমাবেশ পল্টনেই করব।’
শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উপযুক্ত মনে করায় সেখানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘ডিএমপি এই জায়গা (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উপযুক্ত মনে করেছে, সেই জন্য এই জায়গা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কিছু কর্মসূচি আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তারা ব্যবহার করতে পারবে।’
সমাবেশস্থলের জন্য ভেন্যু নিয়ে সরকারের এমন অবস্থান বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের পক্ষে সমাবেশের তারিখ পেছানো সম্ভব না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের কর্মসূচী আছে ৯ তারিখ পর্যন্ত। আমরা যতদূর জানি, এরপরেও তাদের কর্মসূচী আছে। এই সমাবেশের জন্য আমাদের পক্ষে তো আর ১ দিনে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব না।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বিএনপির সমাবেশের জন্য ভেন্যু হিসেবে দেওয়াকে ‘অপ্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি’ বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগে নয়াপল্টনে বহু সমাবেশ করেছি। ম্যাডামও (খালেদা জিয়া) এখানে অনেক সমাবেশ করেছেন। কখনো কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। কাজেই এখানে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতেই পারে না।’
সারা দেশে বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগ বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে। তারা অগ্নি সন্ত্রাসের কথা বলছে, অথচ এগুলো তাদেরই সৃষ্টি। গ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা, বিরোধী দলকে দমন করে রাখার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এসব অজুহাত তারা দেখাচ্ছেন।’
শনিবার অনুষ্ঠিত বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশ কোনো বাধা ছাড়াই হয়েছে এবং সরকার ও আওয়ামী লীগ সহযোগিতা করছে বলেই বিএনপি সমাবেশ করতে পারছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কুমিল্লায় শুধু একটা জিনিসই হয়নি, সেটা পরিবহন ধর্মঘট। এর কারণ হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট কুমিল্লার মাঝ দিয়ে গেছে। কাজেই এটা বাচ্চা ছেলেও বুঝবে যে কুমিল্লায় পরিবহন ধর্মঘট কেন দেওয়া হয়নি। কিন্তু দেখেন রাজশাহীতে আবার ঠিকই পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব মিথ্যাচার দিয়ে তো আর সত্যকে চাপা দেওয়া যায় না। আর বাধার কথা বললে, কুমিল্লায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে অনেকগুলো। তার আগে দেখেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে আমাদের সমাবেশ উপলক্ষে লিফলেট বিতরণকালে গুলি করে আমাদের ছাত্রদল নেতা নয়নকে হত্যা করা হয়েছে। কাজেই তাদের বাধা সারা দেশে একইভাবে চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন তারা দেশের মিডিয়া, আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে দেখাতে চায় তারা জনসভার অনুমতি দিচ্ছে। সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার তো কিছু নেই। এটা তো আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা শুধু তাদেরকে অবহিত করব, সেটা করেছি। একইভাবে যাদের মাঠ আমরা সমাবেশের জন্য ব্যবহার করতে চাই তাদের কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করি।’
‘আমাদের সমাবেশের বিষয়ে পুলিশ বলছে, যেখানে ভালো মনে করবে সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেবে। আগ বাড়িয়ে তাদের এমন কথা এবং যে ভাষায় তারা কথা বলছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্ববাদী চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, এই দেশের মালিক জনগণ না, এই দেশের মালিক আওয়ামী লীগ’, যোগ করেন তিনি।