নির্বাচন কমিশন বা ইসি গঠনে সার্চ কমিটির কাছে জমা দেয়া সব নাম সোমবার(১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
সেই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল এখনো সার্চ কমিটির কাছে নাম দেয়নি, তারা সোমবারের মধ্যে নাম দিতে পারবেন বলেও জানান তিনি। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যই এ সময় বাড়ানোর কথা বলেন ওবায়দুল হাসান।
রোববার তৃতীয় সেশনে বৈঠক শুরুর আগে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এ কথা জানান তিনি।
এ সময় তিনি বিএনপি এবং সিপিবির নাম উল্লেখ করে সার্চ কমিটির কাছে তাদের নাম দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন ওবায়দুল হাসান।
সার্চ কমিটির সভাপতি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদের ওয়েবসাইটে সেগুলো প্রকাশ করা হবে এবং গণমাধ্যমেও বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে। মূলত বিশিষ্টজনদের অনুরোধেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে রোববার তৃতীয় সেশনের বৈঠক শুরু করে রাষ্ট্রপতির গঠন করে দেয়া সার্চ কমিটি। এ সেশনে অংশ নিতে ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
রোববারের সভায় অংশ নিয়েছেন শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির (বীরপ্রতীক), সাবেক এডিশনাল আইজিপি নুরুল আলম, সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, শিক্ষাবিদ আইনুন নিশাদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখওয়াত হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খালিকুজ্জামান, প্রজন্ম-৭১ এর ডাক্তার নুজহাত চৌধুরী, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, স্থানীয় সরকার বিশেজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ এবং কবি মহাদেব সাহা উপস্থিত আছেন।
ইসি গঠনে শনিবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হয় বৈঠকের প্রথম সেশন। তাতে ১৪ বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন। প্রথম সেশনে ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৈঠক শেষ হয় ১২টা ৩৭ মিনিটে।
পরের সেশনে বৈঠক শুরু হয় দুপুর ১টা ৫ মিনিটে। ওই সেশনে ১১ জন নাগরিক অংশ নেন। বৈঠক শেষ হয় বিকেল ৩টার দিকে।
আগামীকাল সোমবার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের। তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা গেল না।
তবে এই কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের পর সংবিধানে উল্লেখ থাকা নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় গঠন হয়েছে সার্চ কমিটি।
এর আগেও দুটি নির্বাচন কমিশন এই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন হয়েছিল। সেটিই এবার আইনি কাঠামোয় নিয়ে আসা হলো।
আগের দুটি সার্চ কমিটিকে বিএনপি নাম দিলেও এবার অবশ্য তারা রাষ্ট্রপতির সংলাপ এবং সার্চ কমিটির নাম চাওয়াকে গুরুত্ব দেয়নি।
বিএনপির অভিযোগ, রাষ্ট্রপতির গঠন করা সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রথমে রকিবউদ্দিন আহমেদ ও পরে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন যে দুটি জাতীয় ও যেসব স্থানীয় নির্বাচন করেছে, সেগুলো সুষ্ঠু হয়নি। তাই তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। তারা দাবি করছেন, সেই নির্দলীয় সরকারই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।
রকিব কমিশনের করা ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বিএনপি ও তার সমমনারা বর্জন করেছিল। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে এই জোট অংশ নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করেছে।
বিএনপি এবার সার্চ কমিটিকে নাম না দিলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠনে তিন শতাধিক নাম জমা দিয়েছে। কত নাম জমা পড়েছে এ নিয়ে অবশ্য একটি বিভ্রান্তিও আছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন তারা ৩২৯টি নাম পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এমনও হতে পারে, একজনের নাম চারবার-পাঁচবার এসেছে। সেগুলো সর্ট আউট করলেই আক্যচুয়ালি কতজন ভ্যালিড হয় সেটা বোঝা যাবে।’
পরে গুনে নাম পাওয়া যায় ৩০৯টি।
খুলনা গেজেট/ এস আই