খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ পৌষ, ১৪৩১ | ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ

সেতু ভেঙেছে আম্পানে, বাঁশের সাঁকোই এখন ভরসা !

মোস্তাক আহাম্মেদ, হরিণাকুন্ডু

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাঁপাশহাটিয়া ইউনিয়নের শাখারিদহ-নগরবাথান সড়কের দারিয়াপুর নামক স্থানে নবগঙ্গা খালের ওপর নির্মিত ১০ মিটার সেতুটি চলতি বছরের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝঁড়ে সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙে খালে পড়ে যায়। সেই থেকে আজও সংস্কার করা হয়নি সেতুটির।

চার ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সেতু এটি। সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের সম্পূর্ন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসী চাঁদা তুলে সেতুর ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে কোনরকমে পায়ে হেটে পারাপার ও রিকশাভ্যান চলাচলের ব্যবস্থা করলেও প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ি, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন শত শত ব্যবসায়ি, কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। তবুও যেন দেখার কেও নেই। জনপ্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্টরা একে অপরের ওপর দায় চাপিয়েই পার।

     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ষাটের দশকে তৎকালিন ইপি ওয়াপদা (ইষ্ট পাকিস্থান ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভলপমেন্ট অথরিটি) কর্তৃক ওই সেচ খালের ওপর নির্মিত সেতুটি। ষাট বছর ধরে এই সেতুর কোন সংস্কার করা হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতার কারণেই সেতুটির বেহাল অবস্থা।

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো সেতুটির দু‘পাশের রেলিংসহ মাঝের পুরো অংশ ভেঙে খালের মধ্যে পড়ে গেছে। স্থানীয়রা নিজেদের চলাচলের প্রয়োজনে সেতুর উপর তৈরি করেছেন বাঁশের সাঁকো। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে রিকশাভ্যান, মোটরসাইকেলসহ স্থানীয়ভাবে তৈরি ছোট ছোট যান। সেতু পারাপারের সময় যাত্রী নামিয়ে চলাচল করছে ওইসব স্থানীয় যান। প্রতিদিন এই সেতু পার হয়ে হাজারও মানুষ চলাচল করেন। বিশেষ করে সেতুটির ওপারে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান বাজার। আশেপাশের কয়েকটি জেলার সবচেয়ে বড় কাঁচামালের বাজার এটি। ওই সেতু পার হয়ে উপজেলার কাঁপাশহাটিয়া, রঘুনাথপুর, দৌলতপুর, চাঁদপুর ইউনিয়নসহ অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারও কৃষক ও কাঁচামাল ব্যবসায়িরা ওই বাজারে ব্যবসায়িক কাজে কেনাবেঁচার জন্য যাতায়াত করেন।

     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

এছাড়াও সেতুর ওপারে বৈডাঙ্গা বাজার, দশমাইল বাজার, গান্না বাজার ও হলিধানি বাজারে রয়েছে এলাকার বড় পশুর হাট ও পানবাজার। সেখানেও প্রতিদিন কেনাবেঁচা করতে শত শত ব্যবসায়ি ও সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন। সেতুটির এই বেহালদশার কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এসব ব্যবসায়িরা। অন্তত ৪০-৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে এখন ওইসব বাজারের ব্যবসায়িক কাজে যাতায়াত করছেন তারা। এতে ব্যয় বেড়েছে অন্তত তিনগুন। প্রতিনিয়তই হতে হচ্ছে ভোগান্তির শিকার।

দারিয়াপুর গ্র্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, প্রায় ষাট বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে আজ অবধি এর সংস্কার করা হয়নি। এমনিতেই দীর্ঘ বছর সংস্কার না করায় সেতুটি দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। আম্পান ঝড়ে পুরো সেতুটি ভেঙে খালের মধ্যে পড়ে গেছে। এতে মানুষের খুব ভোগান্তি হচ্ছে। চেয়ারম্যানসহ মাঝে মাঝেই লোক আসে, সেতুর মাপযোগ করে চলে যায় কিন্তু কোন কাজ হয়না।

কাঁপাশহাটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত দৌলা ঝন্টু বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওপর সেতুটি নির্মিত। তবে সড়কটি এলজিইডির হওয়ায় তারা কর্নপাত করছেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তবে এলজিইডির কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে তারা সেতুটির পুন:নির্মাণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি ত্রাণ মন্ত্রনালয়ে মাধ্যমে পুন:নির্মাণের জন্য আমি ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকল্প দপ্তরের মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। পাশাপাশি এলজিইডির মাধ্যমেও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামাল হোসাইন বলেন, ওই সেতুটি অন্য দপ্তরের হলেও জনদুর্ভোগের কথা ভেবে দুর্য়োগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে সেতুটির পুন:নির্মাণের জন্য খুলনা ডিভিশনাল প্রকল্পে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!