সুলতানা রাজিয়া কষ্টে আছেন। এখন তার নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। মধ্য বয়সে এসে ধুঁকে ধুঁকে সময় পার করছেন। আলো ঝলমল জীবনে এমন দিন আসবে স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। যাকে এক নজর দেখার জন্য টিকিট কেটে প্রচন্ড শীতের মধ্যেও সারারাত অপেক্ষা করেছেন হাজার হাজার দর্শক। আজ তাঁর খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই।
নব্বই দশকের মঞ্চ কাঁপানো প্রথম সারির এ যাত্রা নায়িকার আসল নাম গঙ্গাদেবী। ঐতিহাসিক যাত্রাপালা ‘সুলতানা রাজিয়া’র চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। তৎকালীন সময়ে সুলতানা রাজিয়া নামে সমাদিতও হন। বর্তমানে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শ্যামপড়া গ্রামে স্বামী মাখন লাল মন্ডলের বাড়িতে বসবাস করছেন। সুদিনের অপেক্ষায় বসে বসে মুখস্থ করছেন যাত্রার সংলাপ।
সোমবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে আলাপকালে গঙ্গাদেবী জানান, ১৯৬৬ সালের পহেলা জানুয়ারী যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার বড়খুদাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা নন্দ কুমার বিশ্বাস, মা ষষ্ঠী রানী বিশ্বাস। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। মামা দুলাল বসাক ও মামী মায়া বসাক পেশায় যাত্রা শিল্পি ছিলেন। সেই সুবাদে যাত্রার প্রতি ছিল বিশেষ টান।
জানালেন দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে মামা-মামীর হাত ধরে শখের বসে ঝিনাইদাহের কালিগঞ্জের ব্রজেন বিশ্বাসের ‘নবযুগ অপেরায়’ যোগদেন। এখানে পার্শ্ব চরিত্রে ৪ বছর কাজ করেন। এরপরে সাতক্ষীরার আলফাজ উদ্দিনের সবিতা অপেরায় নায়িকা হিসেবে যোগদেন। নায়িকা হিসেবে জীবনের প্রথম যাত্রপালা ছিল ‘আমি মা হতে চাই’। নায়ক ছিলেন অশোক ঘোষ। এ দলে ৫ বছর সুনামের সাথে কাজ করেন। এরপর জোনাকী অপেরা, নাট্য মঞ্জুরী, পদ্মা অপেরাসহ বিভিন্ন অপেরায় সুনামের সাথে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, নব্বই দশক থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যাত্রা জগতে নায়িকা ও গায়িকা হিসেবে দেশ ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। বিশেষ করে সুলতানা রাজিয়ার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শক হৃদয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেন ও সমাদিত হন। এরপর ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি জোট সরকার সারা দেশে যাত্রাপালা নিষিদ্ধ করে দেন। সেই থেকে অন্য সকল যাত্রা শিল্পিদের মত তাঁর জীবনেও নেমে আসে ঘোর অমাবস্যা। এতদিনে জমানো টাকা ও জায়গা-জমি বিক্রি করে সব খাওয়া শেষ। শরীরেও নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। কোথাও গানের অনুমতি নেই। তাই এখন অর্থকষ্টে পার করছেন মানবেতর জীবন।
গঙ্গাদেবী আরও বলেন, ‘আমাকে এক নজর দেখার জন্য টিকিট কেটে প্রচন্ড শীতের মধ্যেও হাজার হাজার দর্শক সারারাত অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু আজ আর কেউ খোঁজ-খবর নেন না।’
গঙ্গাদেবীর স্বামী যাত্রা পরিচালক মাখন লাল মন্ডল বলেন, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নিবন্ধিত আমাদের ‘রাজবানী অপেরা’ নামে একটি যাত্রদল রয়েছে। এ ছাড়াও দেশে শিল্পকলা একাডেমি নিবন্ধিত আরও ৭০ টি দল রয়েছে। কিন্তু কোথাও কোন যাত্রাপালার অনুমতি নেই। এই যাত্রা জগতের সাথে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে আমাদের মত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই