সুন্দরবনের দুবলারচরে আলোরকোলে ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নান ও রাস পূজা’র তীর্থযাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতে জন্য ৮টি নৌরুট নির্ধারণ করে দিয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবনে চোরা শিকারি ও কাঠ পাচারকারীদের ঠেকাতে এসব নৌপথ দিয়ে ১৭ নভেম্বর ভোর থেকে বন বিভাগসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের পাহারায় পূণ্যার্থীরা বন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে বৈধ পাশ-পারমিট নিয়ে রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নান ও রাস পূজা’র যেতে পারবেন। বঙ্গেপসাগর মোহনায় সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে আগামী ১৮ নভেম্বর রাতে রাস পূজা ও ১৯ নভেম্বর ভোরে সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে।
রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নানে যেতে সুন্দরবন বিভাগের অনুমোদিত ৮টি নৌপথের মধ্যে রয়েছে, ঢাংমারী অথবা চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোন আইল্যান্ড হয়ে দুবলার চর। বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলার চর এবং শরণখোলা স্টেশন-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলার চর। বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বলনদী-পাটকোস্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর। কদমতলা থেকে ইছামতি নদী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগা দোবেকী হয়ে দুবলার চর। কৈখালী স্টেশন হয়ে মাদার গাং, খোপড়াখালী ভারানী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী হয়ে দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়ুয়া শিবসা-শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর ও নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী দিয়ে দুবলার চর।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নানে যেতে সনাতন পূর্ণার্থীদেন নির্ধারিত রুটের পছন্দ মতো একটিমাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং দিনে চলাচল করতে পারবেন।
সুন্দরবন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও পূর্ণার্থীদের নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার নোঙ্গর করতে পাবেনা। প্রতিটি নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলারে গায়ে রং দিয়ে বিএলসি অথবা সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে। সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (পাশ) ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ করে এমন সব বস্তু, শব্দযন্ত্র বাজানো, পটকা ও বাজি ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য, দেশীয় যে কোনো অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেনা। প্রতিটি নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলারকে দুবলার চরে আলোনকোলে এসে কন্ট্রোল রুমে বাধ্যতামুলক ভাবে রিপোর্ট করতে হবে বলেও জানান তিনি।
এবারের রাস পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ দিন দেশী বিদেশী পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সময়ে সনাতন ধর্মালম্বি ছাড়া অন্য ধর্মের কোন লোক দুবলার চরের আলোরকনো যেতে পারবেনা। সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি সুরক্ষায় দুবলার আলোরকোলে ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নান ও রাস পূজায় এখন থেকে আর মেলা অনুষ্ঠিত হবেনা বলে বলে জানান বনকর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন।
প্রতিবছর নভেম্বর মাসে রাস পূর্ণিমার তিথীতে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরিশাল ও চট্রগ্রামসহ দেশে-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার সনাতন পূর্ণার্থী সুন্দরবনে আলোরকোলে রাস পূর্ণিমার পূর্ণস্নান ও রাস পুজায় অংশ নিয়ে থাকেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই