বাগেরহাটের চিতলমারীতে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে হাসিকনা বিশ্বাস (৩৮) নামে এক স্কুল শিক্ষিকা আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার বিকেলে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়া তার লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খড়মখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শত শত মানুষ উপস্থিত হয়ে সুদখোরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা এ ঘটনার জন্য দায়ী সুদখোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন। সুদখোরদের কারণে এর আগেও চিতলমারীতে একাধিক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন এবং অসংখ্য পরিবার নিঃশ্ব হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।
এক ছেলের মা শিক্ষিকা হাসিকনার স্বামী যুগল কান্তি স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেনের প্রধান শিক্ষক। আর্তনাদ করতে করতে তিনি জানান, বসবাসের জন্য জায়গা কেনা ও ঘর নির্মানের জন্য তিনি চিতলমারীর এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি’র কাছ থেকে চড়া সুদে ৫ লাখ, এক নারীর কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, আরো দুইজনের কাছ থেকে ২ লাখ, ঔষধ কোম্পানীর এক লোকের কাছ ৪ লাখ, স্থানীয় ব্যক্তির কাছ থেকে ১ লাখ ও আরেকজনের কাছ থেকে কারেন্ট সুদে টাকা নিয়ে মোট ২৬ লাখ টাকা দিয়ে খড়মখালী গ্রামে ৩২ শতক জমি ক্রয় করেন। টাকা সুদে নেওয়ার বিনিময়ে তাদের (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ের কাছ থেকে ফাঁকা ১০ চেকে স্বাক্ষর নেয় ওই সুদখোরেরা। দেনার চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ টাকা পরিশোধ করেন। তারপরও টাকা পরিশোধ হয়নি বলে ওই সুদখোরেরা দাবী করে। স্বাক্ষর নেওয়া ফাঁকা চেকও ফেরৎ দেয় না। উল্টো অকথ্য কথা বলে। একপর্যায়ে সুদের টাকার দায়ে চিতলমারীর এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি তার বসত বাড়িসহ ভিটেমাটি সব জোর কারে লিখে নেয়।
এরপর থেকেই অন্য সুদে কারবারিরা চড়াও হয় তাদের উপর। এ ঘটনার জের ধরে শনিবার সকালে এক নারী ও পুরুষ সুদের টাকা আদায়ের জন্য তাকে ও তার স্ত্রীকে রাস্তায় অকধ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্চিত করে। এদিন দুপুরে তিনি বাড়ি না থাকার ফাঁকে অন্যএক বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী হাসিকনাকে নির্মম মানসিক নির্যাতন করে। তিনি বাড়িতে ফিরে দেখেন তার স্ত্রী হাসিকনা ঘরের আড়ায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। তিনি তার স্ত্রীর আত্মহত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট / এমএম