সীমান্তে স্বজনহারাদের কান্না যেন থামছে না। বিশেষ করে লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের একের পর এক গুলিতে ঝরছে বাংলাদেশিদের তাজা প্রাণ। জেলায় গত বছরে বিএসএফের গুলিতে ঝরেছে ১৫টি তাজা প্রাণ। আর গত দুই মাসেই ঝরেছে ৮ প্রাণ। ফলে সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় সীমান্তে কাঁটাতার রয়েছে ২৮৪ কিলোমিটার। কাঁটাতারের বেড়া নেই ৭৮ কিলোমিটার। ২৫ পয়েন্টে সীমান্তে চলে চোরাচালানি। পয়েন্টগুলোতে প্রতি রাতে সক্রিয় থাকে ৫ শতাধিক চোরাকারবারি। রয়েছে ৫০ জন গডফাদার। গডফাদাররা সবাই রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা।
সীমান্তে গরু আনতে গত এক বছরে প্রাণ হারায় ১৫ বাংলাদেশি। ৮ নভেম্বর মহিষতুলি সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে ওয়াজকুরুনী নামের এক যুবককে। এখনো শুকায়নি ওয়াজকুরুনীর মায়ের চোখের জল। প্রতিদিন কান্না তার সঙ্গী। ছেলে হারিয়ে তার মা পাগলপ্রায়। বিএসএফের গুলিতে হত্যার শিকার অনেকের বাড়ি গিয়ে দেখা মেলে করুণ চিত্র। কোথাও কোথাও এখনো পথ চেয়ে আছে স্বজনরা, আসবে তাদের সন্তান-বাবারা।
বিজিবি, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, বছরের শুরুর ভোর ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর গভীর রাতে বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিপুল মিয়া নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়। ভারতীয় চাংরাবান্ধা বিএসএফ ক্যাম্পের টহল সদস্যরা তাকে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গরু চোরাচালানের সময় গুলি করে হত্যা করে। ২৯ ডিসেম্বর হাতিবান্ধা বড়খাতা দোলাপাড়া সীমান্তে ২ বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ। নিহতরা হলেন ওই গ্রামের জাকির হোসেন মংলু ও সাদিক হোসেন।
১৫ ডিসেম্বর পাটগ্রাম শমসের নগর সীমান্তে শাহাদতকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। ৮ নভেম্বর ভারতের কৈইমারী বিএসএফ সদস্যরা লালমনিরহাটের মহিষতুলি সীমান্তে ওয়াজকুরুনী ও আয়নাল হোসেন নামে দুই বাংলাদেশি গরু চোরাকারবারিকে গুলি করে হত্যা করে।
২৭ নভেম্বর হাতিবান্ধা টংভাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা সাদ্দাম হোসেন নামের এক বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করে। ১৪ ডিসেম্বর আরও এক বাংলাদেশি নিহত হয় সীমান্তে। ১৭ মার্চ জগৎবেড় সীমান্তে রেজাউল নামের এক বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। সীমান্তে আতঙ্ক থাকার কারণে কৃষকরাও কৃষি কাজে যাচ্ছে না।
মহিষতুলি সীমান্তের কৃষক রহমত আলী জানান, সীমান্তের কাছে বাড়ি জায়গা-জমি সীমান্তঘেঁষা। বিএসএফ যেভাবে গুলি করে হত্যা করছে তাতে জমিতে চাষাবাদ বন্ধের পথে। দুর্গাপুর সীমান্তের রবিউল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না কখন যে বিএসএফ গুলি করে।
হাতিবান্ধার বড়খাতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামান সোহেল জানান, একের পর এক সীমান্তে গেলে বিএসএফ বাংলাদেশি পেলেই হত্যা করবে এ কোন আইন। আমরা এর বিচার চাই।
৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসান শাহরিয়ার জানান, বাংলাদেশিরা সীমান্তের কাছে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করায় বিএসএফ গুলি করে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, সীমান্তে হত্যা বন্ধে বিজিবিকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিজিবি-বিএসএফ এ নিয়ে বৈঠক করছে।
খুলনা গেজেট/কেডি