ঘড়ির কাঁটা তখন ভোর পাঁচটা ছুঁইছুঁই। হঠাৎ বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় খুলনা সিটি মেকিডেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। রোববার (৬ ডিসেম্বর) রাতে খুলনা গেজেটের কাছে এমন অভিযোগ করছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-গ্রন্থাগারিক কাজী ফেরদৌস।
কাজী ফেরদৌসের পিতা কাজী গোলাম ছরোয়ার (৭৬) গত শনিবার সকাল ছয়টার দিকে মারা গেছেন। নিহতের বাড়ি খুলনা নগরের টুটপাড়া ৩২ নম্বর হাজীবাগ লেন এলাকায়। অভিযোগ রয়েছে, দিনের পর দিন গোলাম ছরোয়ারের মতো অনেকেই সঠিক সময়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে এভাবে মারা যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্মকর্তার ধারণা, বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে কিছু শর্তাবলী দেওয়া থাকে। তারমধ্যে হাসপাতালে রোগী আসলে প্রথমে জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান অন্যতম। সে ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসাসেবা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় তাঁর বাবাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লোকজন। তিনি বলেন, বাবার বয়স হয়েছে বুঝলাম। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু সিটি মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরি চিকিৎসা না দিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। যা একটি বেসরকারি হাসপাতালের কাছে কাম্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।
ফেরদৌস বলেন, ‘আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা হয়েও নিজের বাবার জন্য হাসপাতালটি থেকে কাঙ্খিত সেবা পায়নি। সেখানে একজন সাধারণ নাগরিক কীভাবে সেবা পাবে?’ তিনি বলেন, আমি পরিচয় দেয়ার পরও বেসরকারি ওই হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা কর্ণপাত না করে আমার বাবাকে বের করে দেন। সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানিয়েছে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে।
কাজী ফেরদৌস আরও বলেন, বেসরকারি ওই চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানটি যদি প্রাথমিকভাবে জরুরি চিকিৎসা প্রদান করতেন, তাহলে হয়তো আমার বাবার মৃত্যু এভাবে হতো না। তিনি বলেন, আজ আমাদের সঙ্গে এই হাসপাতালটি এমন ব্যবহার করছে! না জানি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে। আক্ষেপের সঙ্গে তিনি জানান, কেনো তারা এভাবে মানুষকে জরুরি সেবা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়!
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ম্যানেজার অ্যাডমিন মো. হামিদুল ইসলাম মুঠোফোনে সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা গেজেটকে বলেন, ওই রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। জরুরি চিকিৎসার মাধ্যমে আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমাদের বেড ফাঁকা না থাকায় তাকে খুমেক হাসপাতালে নেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। প্রাথমিক অবস্থায় ওই রোগীকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেবা দেন বলে দাবি করেন তিনি।
খুলনা গেজেট / এনএম