ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। সেখানে অবস্থানের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বৃহস্পতিবার দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন তিনি। সেখানে তিনি সাময়িক অবস্থানের অনুমতি পাবেন বলে থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গত সাত দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না দেশটি। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না লঙ্কান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো।
ভয়াবহ এই অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে দেশটির হাজার হাজার মানুষের টানা আন্দোলনের মুখে গত ১৪ জুলাই সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। বিক্ষোভকারীরা কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখলে নেওয়ার পর তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপ, পরে সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে যান। সিঙ্গাপুরের সরকার তাকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত দেশটিতে অবস্থানের অনুমতি দেয়।
কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী গোটাবায়া সিঙ্গাপুর থেকে থাইল্যান্ডে সাময়িক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। দুটি সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর থেকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে পৌঁছাবেন। তবে তিনি ঠিক কখন পৌঁছাবেন সেটি পরিষ্কার নয়।
থাই কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাজাপাকসের রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার কোনও ইচ্ছা নেই। তবে দেশটিতে তিনি সাময়িক অবস্থান করবেন।
বুধবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা একটি মানবিক বিষয় এবং চুক্তি অনুযায়ী, তাকে সাময়িক অবস্থানের অনমুতি দেওয়া হয়েছে। তবে থাইল্যান্ডে অবস্থানকালীন রাজাপাকসে কোনও ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন প্রায়ুত।
থাইল্যান্ডের সাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রামুদউইনাই বলেছেন, রাজাপাকসের থাইল্যান্ড সফরে শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকারের সমর্থন রয়েছে। সাবেক এই লঙ্কান প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক পাসপোর্ট রয়েছে; যেটি নিয়ে তিনি থাইল্যান্ডে ৯০ দিন অবস্থান করতে পারবেন।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমানোর পর থেকে শ্রীলঙ্কার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে কখনই জনসম্মুখে দেখা যায়নি। থাইল্যান্ডে আশ্রয়ের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অব্যাবস্থাপনা, অযৌক্তিক কর কাটছাঁট, করোনা মহামারির কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস ও ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা না ভেবে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় দেশটির দুরবস্থার প্রধান কারণ।
বর্তমানে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও বিভিন্ন দেশের কাছে শ্রীলঙ্কার দেনা রয়েছে ৫১০ কোটি ডলার। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ায় গত মাসের শুরুতে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।