দেশ থেকে সিঙ্গাপুরে পাচার করা বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে আতংকে রয়েছেন বাংলাদেশীরা। গত দেড় দশক ধরে দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে সিঙ্গাপুরে বিলাশী জীবন কাটানোর অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে। এসব সম্পদই এখন কাল হয়ে দাড়িয়েছে তাদের জন্য।
কারণ বিদেশ থেকে পাচার করে আনা প্রায় ১০০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলারের অর্থসম্পদ জব্দ করেছে সিঙ্গাপুর পুলিশ। মানি লন্ডারিং ও জালিয়াতির মাধ্যমে এসব অর্থসম্পদ সে দেশে আনায় তুরস্ক, চীন, সাইপ্রাস ও কম্বোডিয়াসহ কয়েকটি দেশের ১০ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ) অভিযান চালিয়ে সিঙ্গাপুরের সান্তোসা কোভ, ট্যাংলিন, অরচার্ড, হল্যান্ড ও রিভার ভ্যালিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বিদেশি ১০ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব এলাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল বাংলো, ফ্ল্যাট ও অভিজাত বাড়িতে বসবাস করতেন তাঁরা।
এদিকে সিঙ্গাপুর সরকারের এমন অভিযানে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশী বাংলাদেশীদের মাঝে। বিশেষ করে গত ১৪ বছর ধরে অবৈধভাবে যারা দেশ থেকে টাকা পাচার করেছে তাদের আতংক সবচেয়ে বেশি। তারা নানাভাবে অভিযানের পরবর্তী অংশ জানান চেষ্টা করছেন। সিঙ্গাপুরে থাকা পরিবার নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সবার মাঝে।
জানা গেছে, সিঙ্গাপুর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চার শতাধিক সদস্য অভিযানে অংশ নেন। এতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বাণিজ্যবিষয়ক বিভাগ (সিএডি), দাঙ্গা পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা যুক্ত ছিলেন। বলা হচ্ছে, দেশটির ইতিহাসে মানি লন্ডারিংবিরোধী সবচেয়ে বড় অভিযানগুলোর একটি এটি।
বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায় সিঙ্গাপুর পুলিশ। এতে বলা হয়, অভিযানে ৯ জন পুরুষ ও ১ জন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বয়স আনুমানিক ৩১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। অভিযানে ৯৪টি জমি-বাড়ি এবং ৫০টি গাড়ির নামে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর অর্থ হলো মালিকেরা এসব জমি ও গাড়ি বিক্রি করতে পারবেন না। এসব জমি-বাড়ি ও গাড়ির মোট মূল্য ৮১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে।
অভিযানে ৩৫টির বেশি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে পুলিশ। এসব হিসাবে ১১ কোটি ডলারের বেশি অর্থ জমা রয়েছে। এ ছাড়া জব্দের তালিকায় রয়েছে অনলাইনে সম্পদ থাকার ১১টি নথি, ২টি সোনার বার, ২৫০টির বেশি দামি ব্যাগ ও ঘড়ি, ১২০টির বেশি মুঠোফোন ও কম্পিউটার, ২৭০টির বেশি দামি অলংকার।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানে জব্দ করা অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৪ বছরে দেশ থেকে পাচার টাকার একটি বড় অংশ সিঙ্গাপুরে রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ যেগুলো সুইস ব্যাংক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় ছিল সেগুলো এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিঙ্গাপুরে বেশি স্থানান্তরিত হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢুকেছে এই বছরে। একইভাবে সিঙ্গাপুরেও বাঙ্গালীদের বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে এবং এই সবই অবৈধভাবে পাচার হয়ে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড বা কানাডা গিয়েছিল।
দেশ থেকে টাকা পাচার করে সিঙ্গাপুরে বিলাশী জীবন কাটানো ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপ বাণিজ্য, ব্যাংক লুট, সরকারি হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতি ক্রয় বাণিজ্য, ক্যাসিনো কেলেংকারিসহ বিভিন্ন সময় এসব অর্থ সিঙ্গাপুরে পাচার হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে। অনেকে বিদেশে অর্থ পাচার করে সেখানেই বসবাস করছেন। নতুন ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। আবার অনেকে সম্পদ পাচার করে, স্ত্রী ও সন্তানদের সিঙ্গাপুরে রেখেছেন। সিঙ্গাপুর পুলিশের জালে বাংলাদেশী লুটেরা ধরা পড়ে কিনা সেটাই দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।
খুলনা গেজেট/এইচ