খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩ জনের করোনা পজিটিভ
  খুলনায় যুবদল নেতাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়ের জীবনাবসান, শোক দুই বাংলায়

মোহাম্মদ সাদউদ্দিন, কলকাতা

কলকাতার প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়ের(৯১)জীবনাবসান হয়েছে বৃহস্পতিবার। বার্ধক্যজনিত কারণেই তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে দুই বঙ্গ ও সাংস্কৃতিক মহলে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার প্রমুখ শোক প্রকাশ করেছেন।

তার একটা বিশেষ দিক হল, উদ্বাস্তু হয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে এলেও সাম্প্রদায়িকতা তাকে ছোঁয়াতে পারেনি।

উল্লেখ্য, প্রফুল্ল রায ১৯৩৪ সালের ১১সেপ্টেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরের আটপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান সমসাময়িক লেখক। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে তিনি ভারতে আসেন। একটি নতুন ভূমিতে পা রাখার জন্য তাকে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছে। সংগ্রামরত মানুষের জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তিনি সারা দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। আর এই উদ্দেশ্যই তিনি বেশ কিছুকাল নাগাল্যান্ডের আদিবাসীদের মধ্যে বাস করেছিলেন, যারা ছিলো বিহারের অস্পৃশ্য এবং আন্দামানের মূল ভূখণ্ডের শিকড়হীন মানুষ। যাদের অধিকাংশই পরবর্তীকালে তাঁর লেখায় নিশ্ছিদ্রভাবে আবির্ভূত হয়।

উল্লেখযোগ্য রচনা কেয়া পাতার নৌকা, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান, প্রারম্ভিক জীবন প্রভৃতি।

প্রফুল্ল রায়ের রচনাগুলি শহুরে এবং গ্রামীণ উভয় অবস্থাতেই শক্তিশালী এবং সত্যিকারের বিদ্যমান বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরে যা পাঠককে বহুমাত্রিক সামাজিক গোলক ধাঁধা আবিষ্কার করতে সাহায্য করে।

তিনি উপন্যাস এবং ছোটগল্প সহ প্রায় দেড় শতাধিক বই লিখেছেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ছিল “পূর্ব পার্বতী”, যা নাগাল্যান্ডে রচিত হয়েছিল এবং ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তার উদ্বাস্তু জীবনকেন্দ্রিক যে সমস্ত উপন্যাস রচিত আছে সেগুলি হলো ‘কেয়া পাতার নৌকো’ (২০০৩), ‘শতধারায় বয়ে যায়’ (২০০৮), ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ (২০১৪), ‘নোনা জল মিঠে মাটি’ ( ১৩৬৬) ইত্যাদি। ‘কেয়াপাতার নৌকা’, ‘শতধারায় বয়ে যায়’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ আকারে এবং নামে আলাদা হলেও আসলে তিনটি উপন্যাস মিলেই একটি ত্রয়ী উপন্যাস

১৯৬৮-৬৯ সালে মনীন্দ্র রায়ের উদ্যোগে অমৃত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিলো ‘কেয়াপাতার নৌকো তার গল্প উপন্যাস অবলম্বনে ৪৫টির মতো টেলিফিল্ম, টেলি-ধারাবাহিক, ফিচার-ফিল্ম নির্মিত হয়েছে। তার মধ্যে এখানে পিঞ্জর (১৯৭১), বাঘবন্দী খেলা (১৯৭৫), ‘মোহনার দিকে’ (১৯৮৪), ‘আদমি আউর আউরত’ (১৯৮৪), ‘একান্ত আপন'(১৯৮৭), ‘চরাচর'(১৯৯৪), ‘টার্গেট’ (১৯৯৭), ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ (২০০৩), ‘ক্রান্তিকাল’ (২০০৫) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও তার ‘কেয়া পাতার নৌকা’ উপন্যাস অবলম্বনে একই নামে একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করে ভারত, যেটি ভারতীয় চ্যানেল জি বাংলায় প্রচারিত হয়।

উপন্যাস রচনার জন্য প্রফুল্ল রায় সারা জীবন অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০১ সালে ‘মুক্তিযোদ্ধা কাজি ফয়জল’ উপন্যাসের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দিয়েছে একুশে সাহিত্য পদক। ‘ক্রান্তিকাল’ এর জন্য ২০০৩ এ সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। ‘আকাশের নিচে মানুষ’র জন্য ১৯৮৫ তে ‘বঙ্কিম পুরস্কার’, এছাড়াও ‘রামকুমার ভুয়ালকা’, পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ড এর ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট’, ‘শরৎস্মৃতি’, ‘বি কে জে এ’ ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!