বিচারক হিসেবে দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় প্রদান ছাড়াও জাল রায় তৈরির অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রোববার (১৮ আগস্ট) শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় মামলা করা হয়।
এর আগে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায় পরিবর্তনের জন্য প্রতারণা, জালিয়াতির অভিযোগে এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়। রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ বিথির আদালতে এ মামলার আবেদন করেন ইমরুল হাসান নামে একজন আইনজীবী। তবে এদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশ সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদন করলে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ‘ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধান সম্মত ও বৈধ। এ সংশোধনী সংবিধানের কোনো মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।’
রিট আবেদনকারী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে এর শুনানি শুরু হয়। আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় আটজন আইনজীবী বক্তব্য দিয়েছেন। এরমধ্যে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন।
আবেদনে আরও বলা হয়, অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য আমলে না নিয়ে এ বি এম খায়রুল হক তার চাকরি মেয়াদকালের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল।
২০১২ সালের ১৭ মে এবিএম খায়রুল হক অবসর গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি ওই আপিল মামলার নথি বাসায় নিয়ে যান, যা বেআইনি। রায় দেয়ার ১৬ মাস ৩ দিন পর ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় করেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রাখলেও প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে রায় ঘোষণার ১৬ মাস ৩ দিন পর যে রায় প্রকাশ করেন সেখানে তিনি এ অংশটি রাখেননি। অসাধুভাবে প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ রায় দেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এএজে