গেল সাত দশকে সাংবাদিকতার ধরন অনেক পাল্টে গেছে। পূর্বের সাংবাদিকতা ছিল সততা-নির্ভর ও চ্যালেঞ্জিং। আর এখনকার সাংবাদিকতা প্রযুক্তি নির্ভর ও সুবিধা আদায়ের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতিক, অন্য পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের সমীহের চোখে দেখতেন। সাংবাদিকরা দল-মতের উর্দ্ধে থাকায় বিশেষ মর্যাদায় আসীন ছিলেন; এখন আর তা নেই।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে সম্মাননার জবাবে খুলনার প্রবীণ সাংবাদিক মনিরুল হুদা এসব কথা বলেন। খুলনা রিপোর্টার্স ইউনিটি (কেআরইউ) খুলনা বিএমএ মিলনায়তনে এ সম্মাননার আয়োজন করে।
সাংবাদিক মনিরুল হুদা ১৯৫২ সাল থেকে সংবাদপত্র জগতে পদচারণা শুরু করেন। ৬৯ বছর সংবাদকর্মী হিসেবে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি খুলনার একমাত্র উদাহরণ। তিনি ভাষা সৈনিক, সাবেক ছাত্রনেতা, সাংবাদিক নেতা, আয়কর আইনজীবী ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। মনিরুল হুদা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত দৈনিক বাংলা পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি স্থানীয় দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সাংবাদিক মনিরুল হুদা তাঁর কর্মজীবনের বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন ঘটনার বর্নণা তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনী খুলনায় নৃশংসভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। তারা সার্কিট হাউজকে টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহার করতো। অফিসার ক্লাবে মুক্তিকামী নিরীহ মানুষদের আটকে রাখতো। আর ফরেস্ট-ঘাটে নিয়ে কাউকে গুলি, কাউকে জবাই করে হত্যা করতো। মৃতদেহগুলো ফেলা দেওয়া হতো ভৈরব নদে। মানুষের আর্তচিৎকারে প্রতিটি রাত ভারী হয়ে উঠতো। যা কখনো ভুলে যাওয়ার নয়।
তিনি তরুণ সাংবাদিকদের সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সকল প্রকার প্রলোভন, চাপ, ভয়-হুমকি, প্রতিহিংসার উর্দ্ধে থেকে কাজ করতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ ১৫ আগস্ট, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগী সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে সম্মাননা অনুষ্ঠান শুরু হয়। সম্মাননা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মনিরুল হুদাকে তাঁর কাজের স্বীকৃতি-স্বরূপ পদক ও উত্তরীয় উপহার দেওয়া হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনা রিপোর্টার্স ইউনিটি -কেআরইউ-এর আহ্বায়ক গৌরাঙ্গ নন্দী। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মজিবুর রহমান। জীবণী-ভিত্তিক প্রবন্ধ পাঠ করেন খুলনা গেজেটের নির্বাহী সম্পাদক কাজী মোতাহার রহমান। কেআরইউ সদস্য সচিব আবু হেনা মোস্তফা জামাল পপলুর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ইউএনবির ব্যুরো প্রধান শেখ দিদারুল আলম, এনটিভির ব্যুরো প্রধান মুন্সী আবু তৈয়ব, সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আব্দুল হালিম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক গাজী আলাউদ্দিন আহমদ, নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শিলু, ইত্তেফাকের খুলনা ব্যুরো প্রধান এনামুল হক, নগর আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হাসান হিটলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনার আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির ববি, নর্দান ইউনিভার্সিটির গণ-যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান।
খুলনা গেজেট/কেডি