খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
হাজার হাজার বিঘা জমি অবৈধ দখলে, বিপাকে জমির প্রকৃত স্বত্বভোগীরা

সাতক্ষীরায় ৬০ হাজারের অধিক খতিয়ান জরাজীর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলায় সিএস ও এসএ রেকর্ডের প্রায় ৬০ হাজারের অধিক খতিয়ান জরাজীর্ণ। ফলে হাজার হাজার বিঘা জমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে প্রতিপক্ষের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা। এদিকে প্রকৃত স্বত্বের দাবিদাররা বিপাকে পড়ে জমি উদ্ধারপূর্বক মালিকানা স্বত্ব ফিরে পেতে কেউ কেউ আদালতের দারস্থ হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ঘটাচ্ছেন বিরোধমূলক অপরাধ কর্মকান্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ১৭১০টি গ্রামের ১১০৩টি মৌজায় ভূমি সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণাগার জেলা রেকর্ডরুম। এই রুমে লাখো লাখো খতিয়ান রয়েছে। সেপ্রেক্ষিতে সিএস খতিয়ান অন্যতম। যেটি বাংলাদেশের প্রথম খতিয়ান নামে সমধিক পরিচিত। এসএ খতিয়ানও এর বাইরে নয়। এই দপ্তরে রেকর্ডের রেজিষ্ট্রাররে অন্তর্ভুক্ত খতিয়ানকে আরওআর বলা হয়। এর একটি কপি ইউনিয়ন ভূমি অফিসেও থাকে। যাকে ১ম ও ২য় রেজিষ্ট্রার বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি পূর্বের সিএস ও এসএ খতিয়ানের জমি উদ্ধারে বেড়েছে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা। বেড়েছে রেকর্ডরুমের কর্মকর্তার কাছে ভুক্তভোগীদের সার্টিফাইড খতিয়ান পাওয়ার আবেদনপত্রের সংখ্যাও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী জেলায় ৯৬০ টি মৌজা রয়েছে। এরমধ্যে আনুমানিক শ্যামনগরের ১২০ টি মৌজায় ১ লক্ষাধিক, কালিগঞ্জের ২৩০টি মৌজায় ১লক্ষ ২২ হাজারের অধিক, আশাশুনিতে ৭২ টি মৌজায় ৮৫ হাজার, দেবহাটায় ২৬ টি মৌজায় ৫২ হাজার, সাতক্ষীরা সদরের ১২৪ টি মৌজায় ১ লক্ষাধিক, কলারোয়ায় ১০০ টি মৌজায় ৬৫ হাজার ও তালায় ১৬০টি মৌজায় ১ লক্ষ ২৫ হাজারের অধিকসহ মোট ৬ লক্ষ ৪৯ হাজার খতিয়ান রয়েছে। এছাড়াও সিএস খতিয়ান রয়েছে প্রায় ২ লক্ষাধিক।

এ ব্যাপারে জেলা রেকর্ডরুমের কিপার এম গোলাম মোস্তাফা জানান, আমাদের দপ্তরে সিএস ও এসএ খতিয়ান প্রায় ৬০ হাজারের অধিক জরাজীর্ণ বা নষ্ট। উক্ত খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি তুলতে আমাদের স্যারের কাছে প্রতিনিয়ত অনলাইন ও ম্যানুয়ালি আবেদন করছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। সেপ্রেক্ষিতে জঙজ যাচাইপূর্বক সার্টিফাইড খতিয়ান কপি প্রস্তুত করতে কাজ করি আমরা। কারো কারো কপি প্রস্তুত করতে পারি। আবার পুরোনা রেকর্ডের আরওআর জরাজীর্ণ থাকায় কারো কারো সার্টিফাইড কপি প্রস্তুত করতে পানিনা আমরা। তবে আমাদের স্যারের স্বাক্ষরিত ঐ খতিয়ানে একটি কপি তাদের হাতে তুলে দেই। সেই কপিতে লেখা থাকে-‘এই অফিসের জঙজ জরাজীর্ণ থাকায় কপি সরবরাহ করা গেলো না।’ অথচ ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।

এ প্রসঙ্গে মাছখোলা গ্রামের আজাহারুল ইসলাম জানান, কাটিয়া মৌজায় সিএস ৩২৫৫ ও ৩২৫৬ দাগের ১২৬ শতক জমির মধ্যে ৬৩ শতক জমির মালিক আমাদের ওয়ারেশগণ। এসএ ১২২৩ ও ১২২৪ দাগে আমাদের ওয়ারেশগণের নামে ৪৫ শতক জমি রেকর্ড হয়। তবে বিআরএস খতিয়ানে আমাদের নামে ৬৪ শতক রেকর্ডভুক্ত হয়। উক্ত জমি আমাদের দখলে। কয়েক বছর পূর্বে আমাদের মধ্যে ৭ শতক জমি দাবি করে কাটিয়া সরকারপাড়া গ্রামের দেবু পানু গং আদালতে একটি মামলা করে। সেই মামলার আরজিতে এসএ খতিয়ানের বর্ণনা দেয়, সিএস খতিয়ানের কোনো ধারাবাহিকতা লেখেনি। চরম হয়রানিতে পড়েছি আমরা শুধু তা নহে, আমাদের মতো হাজার হাজার জমির প্রকৃত স্বত্বভোগীরা। তিনি আরও জানান, জেলা রেকর্ডরুমে আরওআর জরাজীর্ণ থাকায় এসএ খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি দেয়নি রেকর্ডরুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
তবে একই আরওআর সাতক্ষীরা পৌর ভূমি অফিসে ভালো রয়েছে। সেপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারককে অবহিত করলে শুনানিন্তে এসিল্যান্ড এর কাছে নথি তলব করেন। সেই নথির একটি চিঠি গত ৮ আগষ্ট সাতক্ষীরা পৌর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (নায়েব) মোস্তফা মনিরুজ্জামান গ্রহণ করেন। এখনো উক্ত চিঠির কোনো জবাব দেননি। গত ২৪ আগষ্ট বেলা ১১ টার দিকে নায়েব এর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি ২ সপ্তাহ পরে আবারও যেতে বলেছেন। উক্ত আরওআর যাচাইপূর্বক রিপোর্ট দিলে আমরা হয়রানি থেকে মুক্ত হতে পারতাম।

এছাড়াও একই গ্রামের আজিজ হাসান (বাবু) জানান, ১০১ নং কাটিয়া মৌজার সিএস ও এসএ ২২৬৪, ২২৬৫, ২২৬৬ ও ২২৬৭ দাগের ৮২৯ খতিয়ানে আমার দাদা দবির উদ্দীন সরদার দিং এর নামে ১২৬ শতক জমি রয়েছে। ওই জমির এসএ ৮২৯ খতিয়ানের কপি বাড়িতে খুঁজে না পাওয়ায় সার্টিফাইড কপি উত্তোলনের জন্য গত ১৭ আগষ্ট অনলাইনে আবেদন করে আমার এক চাচাতো ভাই। যার আবেদন আইডিঃ ৯৪২২৪০৩৩৬৭০০। সেপ্রেক্ষিতে গত ২২ আগষ্ট জেলা রেকর্ডরুম শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এসএ ৮২৯ খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করে। সেই সার্টিফাইড কপিতে লেখা “এ অফিসের আরওআর জরাজীর্ণ থাকায় কপি সরবরাহ করা গেলনা।’’

তবে সাতক্ষীরা পৌর ভূমি অফিসের আরওআর ভালো রয়েছে। সেপ্রেক্ষিতে যাচাইপূর্বক ১০১ নং কাটিয়া মৌজার এসএ ৮২৯ খতিয়ানের অবিকল নকল পেতে গত ২২ আগষ্ট আবারও একটি ম্যানুয়াল আবেদন জেলা রেকর্ড কিপারের কাছে জমা দেয়। ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো সুরাহ হয়নি। তিনি আরও জানান, এসএ ১৭৪৮ দাগের ৬৩৭ খতিয়ানে ২৪ শতক জমির মধ্যে আফিলদ্দিন সরদার পিং জহিরদ্দিন ৩.৪৩ শতক জমির স্বত্ববান।

এছাড়াও তারা ৮২৯ খতিয়ানে কোনো স্বত্ববান নহে। অথচ এসএ ২২৬৪, ২২৬৫, ২২৬৬ ও ২২৬৭ দাগের ৮২৯ খতিয়ানের ৬৩ শতক জমি ও ১৭৪৮ দাগের ৬৩৭ খতিয়ানে ১২ শতক জমি জমা খারিজ না করায় ৮২৯ খতিয়ানের ৬৩ শতক ও ৬৩৭ খতিয়ানে ১২ শতক জমি মোঃ আপ্তব উদ্দীন, পিতা- আফিল উদ্দীন, মোঃ আব্দুল্লা, মোঃ আমানউল্যা, মোঃ ওবায়দুল্ল্যা, মোঃ মহিবুল্ল্যা, মোছাঃ জয়নাব বিবি, মোছাঃ জান্নাতি বিবি, মোছাঃ ছকিনা খাতুন, মোছাঃ জোহরা খাতুন, পিং- আকবর আলী, উভয় সাং- মাছখোলা ২০০৯ সালের ১৬ মার্চ ১৭০৪ ()/০৮-০৯ নং জমা খারিজ কেস অনুমোদনের মাধ্যমে নামপত্তন করে ৮২৯/৩ ও ৬৩৭/১ খন্ড খতিয়ানের ৪৯৪৯ হোল্ডিংয়ে এক যোগে নিজেদের নামে নালিশী জমিসহ অন্যান্য জমি রেকর্ড করেছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। উপরিউক্ত বিষয়াদি নিরসনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌর ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মোস্তফা মনিরুজ্জামান জানান, জেলা রেকর্ডরুমে একটি আরওআর থাকে। আমাদের এখানেও একটি আরওআর থাকে। তবে সেই আরওআর তে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে না। ইতিপূর্বে আমাদের আরওআর দেখে খতিয়ানের প্রস্তুতের ক্ষমতা দিয়েছিল। সেই ক্ষমতা এখন আর নেই। তবে ভুক্তভোগীদের মামলার প্রেক্ষিতে আমাদের কাছে জবাব চায়। তখন আমাদের আরওআর তে খতিয়ানের অংশ ভালো থাকলে আমরা জবাবে লিখে দেই সই বিহীন আরওআর অংশে ভালো রয়েছে এবং জমির মালিকানা স্বত্বের বিবরণ লিখে দেই। আর ছেঁড়া থাকলে লিখে দেই জরাজীর্ণ।

সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের একজন কর্মচারী তার রেফারেন্স ব্যবহার না করলে ভালো হয় উল্লেখ করে এসিল্যান্ড এর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে মোবাইলে ফোন করে এবং অফিসে গিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!