কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় অস্থির হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার পেঁয়াজের বাজার। মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে দেশী ও ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার সকালে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে দুপুরে এই খবর চাউর হওয়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। সন্ধ্যায় সুলতানপুর বড়বাজারে খুচরা বাজারে বাংলাদেশী পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে দাম আরো বেড়ে খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকলে দাম আরো বাড়বে বলে জানান সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, সোমবার ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং দেশী পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। হঠাৎ করে দুপুরে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ফলে কেনা দাম বেশী পড়ায় সন্ধ্যার দিকে দেশী পেঁয়াজ ৬০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দুই ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিতে আরো ১০ টাকা বেড়ে যায়। ফলে মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকার ও বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ করে দাম বাড়ায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সাথে অনেক সময় ঝগড়া করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মুকুল জানান, ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে এই খবর প্রচার হওয়ার সাথে সাথে বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। আমাদের কাছে যা পেঁয়াজ ছিল সোমবার তা প্রায় সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন মহাজনরা বলছেন দেশী পেঁয়াজ ৯০ টাকা ও ভারতীয়টা ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হবে। বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছরও সেপ্টেম্বর মাসে কোনো ঘোষণা ছাড়াই ভারত সরতার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এই মুহুর্ত্বে কৃষকদের বাড়িতে মজুদ করা পেঁয়াজ যদি বাজারে ছেড়ে দেয় তাহলে দাম একটু কমতে পারে। তা না হলে দাম আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।
এদিকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত দুই দিন যাবত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভারতীয় কোনো পেঁয়াজের ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করেনি। তবে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের রাখার ব্যাপারে ভারতীয় ঘোজাডাঙ্গা কাষ্টমস ও সিএন্ডএফ কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে কিছু জানাননি বলে জানান ভোমরা স্থল কাষ্টমস ও সিএন্ডএফ নেতারা।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, গত দুই দিন যাবত হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় ঘোজাডাঙ্গা কাষ্টমস ও সিএন্ডএফ কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রাখার ব্যাপারে ভোমরা কাষ্টমস ও সিএন্ডএফ নিতৃবৃন্দকে এখনও পর্যন্ত কোন কিছু লিখিত ভাবে জানাননি।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মাকসুদ খান বলেন, ‘গত ১৩ তারিখ পর্যন্ত ভারতীয় রফতানিকারকরা ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে পেঁয়াজ রফতানি করছেন। ওই দামে তাদের লোকসান হওয়ায় তারা পেয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দিয়েছে’। তবে, পেঁয়াজের রপ্তানী মূল্য বৃদ্ধি করে খুব দ্রুতই তারা আবারো বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানী করবে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম/এমআর