চাকুরি না হওয়ায় প্রতারকের কাছে ঘুষের টাকা ফেরৎ চাওয়ায় বিদ্যালয়ে ঢুকে বৃদ্ধ শিক্ষক সুভাষ দাসকে নির্যাতনের পর পরিকল্পিতভাবে দেয়া শ্লীলতাহানির মামলার প্রত্যাহার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগি শিক্ষকের মেয়ে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সস্মেলনে তালা উপজেলার নুরুল্লাহপুর গ্রামের শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র দাসের মেয়ে রমা রাণী দাস এই দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে রমা রানী দাস বলেন, তার বাবা সুভাষ চন্দ্র দাস তালা উপজেলার ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক। ঠাকুরদাদা নিতাই দাসের দানকরা এক বিঘা জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ফতেপুর রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সরকারিকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তার বাবা ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০২৩ সালে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম অন্যত্র বদলী হয়ে যাওয়ার পর জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ফতেপুর গ্রামের ইষ্টম দাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি(রমা) দুই বার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগের লেখা পরীক্ষায় পাস করলেও মৌখিক পরীক্ষায় টিকতে পারেনি। একপর্যায়ে এক সপ্তাহের মধ্যে পুরাতন পরীক্ষার্থী যারা মৌখিক পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় সূযোগ দেওয়া হবে এমন কথা বলে ১৫ লাখ টাকা ঘুষের চুক্তিতে তার কাছে প্রথমে এক লাখ টাকা দাবি করেন শিক্ষক ইষ্টম দাস। চাকুরি হলে তাকে বাকী ১৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। একপর্যায়ে শ্বশুর বাড়ির সোনার গহনা বন্ধক রেখে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি বাড়িতে ডেকে ইষ্টম দাসের হাতে এক লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে চাকুরি দেওয়া না হলে টাকা সুদাসলে ফেরৎ দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন ইষ্টম দাস। কিন্তু পরবর্তীতে চাকুরি না হওয়ায় টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করায় ইষ্টম ও তার স্ত্রী অঞ্জলী দাসের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। একপর্যায়ে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তাকে ৫০ হাজার টাকা ফেরৎ দেন ইষ্টম দাস। আমার চিকিৎসার জন্য বাকি টাকা ফেরৎ দিতে বলায় তার বাবা ও পরিবারের সদস্যদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ইষ্টম দাস ও তার স্ত্রী অঞ্জলি দাস।
রমা দাস লিখিত আরো বলেন, গত ১০ মার্চ রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিদ্যালয়ের মাঠে পৌঁছানোর পর তার বাবাকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে যান প্রতিবেশি প্রদীপ দাসের ছেলে ও ইষ্টম দাসের স্ত্রীর ঘনিষ্ট বলে পরিচিত আকাশ দাস। এরপরপরই দরজা আটকে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাসের ইন্ধনে বাবাকে বেধরড়ক পেটান আকাশ দাস। পাঁচ মিনিট ব্যাপি মারপিটের ফলে চশমার ফ্রেম ভেঙে চোখের কোনে ও নাকের উপরে ঢুকে রক্তাক্ত জখম হন বাবা। জানতে চাইলে বাবাকে আকাশ বলেন যে, ইষ্টম স্যারের কাছে মেয়ের চাকুরি বাবদ ঘুষের টাকা ফেরৎ চাইলে তার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়েকে দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দেওয়া হবে। এরপরপরই সেখানে হাজির হন বিকাশ দাস। দরজা খুলে আকাশ বেরিয়ে আসলে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় বিকাশ সুবোল দাস, তার ছেলে মহাদেব দাস, মহাদেবের স্ত্রী পুজা দাস, ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা সাঈদা খানমসহ কয়েকজন বাবার কথা শুনে মারপিটের প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্ধ আকাশ ও তার ভাই বিকাশ দাস বাঁশের লাঠি নিয়ে বাবা ও মা ছায়া রানীকে মারতে যান। এরপর বাবা বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সূর্যপদ পালকে অবহিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
পরদিন ১১ মার্চ বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১২টার পরে পুলিশ বাড়ি থেকে বাবাকে ডেকে থানায় নিয়ে পরদিন আকাশ দাসের শিশু কণ্যাকে গত ৭ মার্চ দুপুর সোয়া ১২টায় বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠায়। বাবাকে পরিকল্পিত ও মিথ্যে মামলায় গ্রেপ্তারের নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেছে আকাশ দাসের ছোট ভাই কক্সবাজারে টেকনাফ থানার আর্মস ব্যাটালিয়ন পুলিশের এএসআই হিসেবে কর্মরত প্রকাশ দাস।
রমা রানী দাস জানান, ৯ মার্চ গোপালপুর বলাই ঘোষের আমবাগানে পিকনিক উপলক্ষে ৭ মার্চ থেকে গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালেয় কারিকুলাম উন্নয়নের জন্য ‘উত্তরণ’ নাটকের রিহার্সাল হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। সে অনুযায়ি ৭ মার্চ বাবা বিদ্যালয়ে সাড়ে ৯টায় হাজিরা দিয়ে সকাল ১০টার দিকে বের হয়ে সাড়ে ১০টায় গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। সেখানে রিহার্সাল চলাকালে ইসলামকাটি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সূর্যপদ পালসহ ২৬ জন শিক্ষক বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। এরপরও বাবাকে ইস্টম দাসের পরিকল্পনায় আকাশ দাসের মেয়েকে দিয়ে মিথ্যে ও পরিকল্পিত মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ওই দিন গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকা সংক্রান্ত ভিডিও এবং স্থির চিত্র রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিরাপরাধ বাবার নামে দায়ের করা মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার পূর্বক তার নিঃশর্ত মুক্তি, ইষ্টম দাসের কাছে পাওনা ৫০ হাজার টাকা ঘুষের টাকা ফেরৎ ও বাবার উপর হামলাকারি ও মিথ্যে মামলা দায়েরর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রমা রানী দাসের মা ছায়া রানী দাস উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে ইস্টম দাস বলেন, নিজের সুভাষ দাসকে বাঁচাতে তার মেয়ে সংবাদ সস্মেলনে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে।