খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
'দেশের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীর মানুষ উন্নয়নের সুফল থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হচ্ছে'

সাতক্ষীরায় ভূমিহীন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক আঞ্চলিক সেমিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ভূমিহীন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক এক আঞ্চলিক সেমিনার শনিবার (১৯ আগষ্ট) বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরা এলজিইডি কনফারেন্সে রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ আমার প্রকল্পের উদ্যোগে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

উত্তরণের পরিচালক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ, জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.সাইফুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সাতক্ষীরা জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। কিন্তু আমাদের এখানে জনসংখ্যার বিচারে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমাদের আরও অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করে এবং যাদের প্রয়োজন তাদের বরাদ্দ দেওয়া উচিত। জাটকা ইলিশের মৌসুমে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের অল্প
কিছুদিন সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। আবার এই পেশায় জড়িত সবাই সেই সহায়তা পান না। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্ত ভাতার আওতায় সবাই আসছে না। সরকার সবার জন্য ভাতার চেষ্টা করলেও এখনো সম্ভব হয়নি। আমাদের এখানে ৪০ দিনের একটি কর্মসূচি চলমান ছিলো। যখন কৃষকদের কাজ থাকে না। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করে কৃষকদের একটি কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। কিন্তু দেশের ১৩টি জেলায় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সাতক্ষীরা জেলাও রয়েছে। সাতক্ষীরা ধনী জেলার শ্রেণীভুক্ত হয়েছে বলে এটি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আমরা দরিদ্র হয়ে থাকতে চাই না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধনী জেলার তথ্য সঠিক বলে আমি মনে করি না।

তিনি আরও বলেন, সরকারের সদিচ্ছার কারণে বিভিন্ন সামাজিক নিরপত্তা বিধানের মধ্য দিয়ে এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দারিদ্রতা, অতিদারিদ্রতার সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। সাতক্ষীরার মানুষ দরিদ্র হিসেবে থাকতে চায় না। কিন্তু সঠিক তথ্য থাকতে হবে। সরকারের কাছে সঠিক তথ্য প্রেরণ করতে জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধিসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগী
যাতে শতভাগ হয় সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, দেশের অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। দেশে দুনীতি না থাকলে আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেত। পত্রিকায় দেখেছি সাতক্ষীরার ছয়টি উপজেলাকে ভূমিহীন মুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ তথ্য সঠিন না হলে আমাদের জন্য কিছুটা ক্ষতি হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের ভূমি এবং গৃহহীনদের গৃহ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ভূমিহীনমুক্ত দেখিয়ে দিলে আমাদের এখানে বরাদ্দ আরো কম আসবে, তখন এই জেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তিনি আরো বলেন পরিসংখ্যানের তথ্যের বিভ্রান্তির কারনে ৪০ দিনের কর্মসূচি হারিয়েছি। সাতক্ষীরাকে ১২টি জেলার মধ্যে সমৃদ্ধ জেলা
হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে বক্তাদের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এটি হয়ে থাকলে সংশোধনের জন্য প্রতিবাদ না করলে ভবিষ্যতে সরকারের বিভিন্ন সাহায্য সহানুভূতি থেকে আমরা বঞ্চিত হব।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিদিন ভূমিহীন বাড়ছে। দেশের অধিকাংশ টাকা গুটি কয়েকজন মানু‌ষের হাতে চলে যাচ্ছে। বিধবা ভাতা যেটা দেওয়া হয় সেটা খুবই কম। একই মানুষ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। আবার কেউ একবারও পাচ্ছে না। এজন্য ডাটাবেজ জরুরী। দুর্নীতি বন্ধ করতে সকলের সমন্বয় দরকার। ডাটাবেজ হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে এবং ভূমিহীন ও গৃহহীনদের সঠিক সংখ্যা জানা যাবে। তাদের বরাদ্দ ও সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতায় আনা সহজ হবে। সেমিনারের বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়নের সুফল সবাই সমানভাবে ভোগ করে না এবং সবাই সমানভাবে উন্নয়নের সুযোগ পায় না। যেকারনে আয় বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীর মানুষ উন্নয়নের সুফল থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীর মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যই সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রতি বছরই বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু বাজেট বাড়লেও এই কর্মসূচির একটি বড় অংশ সরকারী কর্মচারীদের অবসর ভাতা, সঞ্চয়পত্রের সুদসহ যারা দরিদ্র নয় এমন মানুষের অনুকুলে চলে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা এখন ধনী জেলা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার তথ্যের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। একের পর এক ঝড় জলোচ্ছ্বাস জলাবদ্ধতাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখানকার দারিদ্র পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়নি বরং চিংড়ি চাষ ও সুন্দরবনে মাছ ধরাসহ অন্যান্য সম্পদ আহরণে কড়াকড়ির কারনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ কাজের সন্ধানে অন্য জেলায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

বক্তারা সাতক্ষীরা জেলার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর দাবী জানান এবং পরিসংখ্যানের বিভিন্ন অবাস্তব তথ্যের সমালোচনা করে তা সংশোধনের জন্য এখনই সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!