সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সাতক্ষীরায় ভিজিডি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই কর্মসূচির আওতায় দুস্থ নারীদের উন্নয়নের জন্য ২০২৩ সাল থেকে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট প্রোগ্রাম নামে নতুন ভিজিডি চক্র শুরু হতে যাচ্ছে। এই চক্রে জেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ২০ হাজার ৯১১জন নারীর কার্ড বরাদ্দ হয়েছে। এতে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার আলোকে স্থায়ীভাবে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, আয়বর্ধক প্রশিক্ষণসহ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলায় ভিডবিøউবি প্রোগ্রামের আওতায় নারীদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা অনুযায়ি আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৩,৬১৯ জন, দেবহাটার ৫টি ইউনিয়নে ২,৫২৪, কলারোয়ার ১২টি ইউনিয়নে ২,৩৪২, কালীগঞ্জে ১২ টি ইউনিয়নে ৩,৭৭৮, সাতক্ষীরা সদরের ১৪টি ইউনিয়নে ২,৩৭০, শ্যামনগরের ১২টি ইউনিয়নে ৩,৯৩০ এবং তালার ১২টি ইউনিয়নে ২,৩৪৮ জন নারীর নামে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলার ৭৮ ইউনিয়নে ২০ হাজার ৯১১টি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় উপকূলীয় শ্যামনগর-আশাশুনি উপজেলায় উপকারভোগীর সংখ্যা বেশি।
জানা গেছে, অতি দরিদ্র মহিলাদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি সুরক্ষার আলোকে স্থায়ীভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী করার জন্য ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডবিøউবি) উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে চরম দুর্দশাগ্রস্ত, অতিদরিদ্র, স্বামী পরিত্যাক্তা নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে নারীর বয়স ২০-৫০ বছরের মধ্যে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। এসব নারীরা ২৪ মাসব্যাপী খাদ্যশস্য সহায়তা পাবেন।
যুব প্রতিনিধি মোঃ হোসেন আলী বলেন, এধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক সময় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি হয়ে থাকে। এসব কাজে যুবদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিলে প্রকুত দবিদার বাছাইয়ে স্বচ্ছতা থাকে। কিন্তু ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট কার্যক্রমের আওতায় যুবদের অন্তর্ভুক্তি করা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমরা এব্যাপাওে মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি, তারা বলছেন তাদের হাতে কিছু নেই। যুবদের সম্পৃক্ত করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ দিলে স্বচ্ছতার জায়গা ফিরে পাবে। তখন কেউ স্বজনপ্রীতির সুযোগ পাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ভিজিডি চক্রে অন্তর্ভুক্তিতে ইতিপূর্বে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মোঃ ফিরোজ উদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, সনাক ও টিআইবি’র মনিটরিং এর মাধ্যমে ২০২১-২২ এ আমরা এটা মনিটরিং করেছিলাম, সেখানে আমরা কিছু অযোগ্য মানুষকে অন্তর্ভুক্ত হতে দেখেছি। সেটা আমরা যথাযথ ভাবে স্থানীয় ইউএনও ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাাদের সাথে শেয়ার করছি যে, এই কার্ড গুলো যারা যোগ্য না তারা পেয়েছে। তাদেরকে সনাক এর মাধ্যমে সুপারিশ দিয়েছিলাম এই কার্ডগুলো বাদ দিয়ে যারা যোগ্য তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে। পরবর্তীতে সনাক এর সুপারিশ মতে ইউএনও’র মাধ্যমে ওই কার্ডগুলো বাদ দিয়ে নতুন করে যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি করা হয়। এটা আমাদের বড় একটা সফলতা।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন বলেন, আমাদের উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৯৩০ জন কার্ড বরাদ্দ পেয়েছে। অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি তিনি দুস্থ নারীদের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। আমার ১২টি ইউনিয়নের কোনো চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে যদি কার্ড বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, বর্তমানে সকল কার্যক্রম অনলাইন এর মাধ্যমে করা হচ্ছে। পদ্ধতিগুলো আধুনিক হয়েছে। আমাদের হাতে কিছু নেই। কেউ সরকারি অন্য কোনো ভাতা পেলে এটা অনলাইনে আবেদন করতে পারবে না। সম্পূর্ন স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রকৃত দাবিদারদেও বাছাই কওে তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এরপরও কোন প্রকার অনিয়ম চোখে পড়লে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা মহিলা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটিতে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকেন। যেখানে যুবদের অন্তর্ভুক্তি করার সুযোগ নেই। আমাদের কিশোর কিশোরী ক্লাব আছে আমরা তাদেরকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।