সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে হঠাৎ করে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। গত ২/৩ দিনের ব্যবধানে ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। দাম নিয়ে বাকবিতন্ডা হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে ওই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। সোমবার এই পেঁয়াজ পাইকারি ৪২ ও খুচরা ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একই সাথে দেশি পেঁয়াজ পাইকারি ৭০ টাকা আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৫৮ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়িরা বলছেন, অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতের বাজারে পেঁয়াজ সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দেশটিতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। তাই বাংলাদেশি আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিচ্ছেন। ফলে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও। মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোমরা বন্দর দিয়ে মাত্র ৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসেছে। সোমবার এসেছিল ৮১ ট্রাক পেঁয়াজ। অথচ গেল সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১০০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। অমদানি কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ কম আসায় বেড়েছে দাম।
এদিকে ভোমরা বন্দরে গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০-৩৫ টাকা। মাত্র ২/৩ দিনের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজ কেজিতে ১২ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা দরে। আমদানি আগের মত অব্যহত না থাকলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ি কামরুজ্জামান মুকুর বলেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। মাত্র ২/৩ দিনের ব্যবধানে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছ দেশি পেঁয়াজের দামও। সরবরাহ আগের মত না হলে দেশি ও বিদেশী দুই ধরনের পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে।
সুলতানপুর বড়বাজারের মুদি দোকানী আনোয়ার হোসেন বলেন, সোমবার ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজার থেকে কিনেছিলাম ৪২ টাকা কেজি দরে। মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট) সেই পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ৪৫ টাকায়। বাধ্য হয়ে আমরা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। অথচ মাত্র কয়েকদিন আগে এই পেঁয়াজ আমরা ৩৩ থেকে ৩৫ টাকায় কিনেছিলাম। সেই সাথে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও। একদিন আগে কেনা ৬৫ কেজি দরের দেশি পেঁয়াজ আজ মঙ্গলবার কিনলাম ৭০ টাকায়। পাইকাররা বলছেন সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। আমাদের কিছু করার নেই। হঠাৎ এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ক্রেতাদের কৈফিয়াত দিতে পারছিনা। পেঁয়াজ বিক্রিকালে নানান প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে আমাদের বলে জানান তিনি।
ভোমরা বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক সাইফুল কবির মিন্টু বলেন, সম্প্রতি ভারতে অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন এবং মজুত কমতে শুরু করেছে। যার ফলে সেখানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। একই সাথে পরিবহন খরচও বাড়তি। এ জন্য আমরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছি। যার প্রভাবে ভোমরা বন্দরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সরবরাহ না বাড়লে আগামীতে দাম আরও বাড়তে পারে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি সহকারী কমিশনার নেয়ামুল হাসান বলেন, ভারতে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকরা হঠাৎ করে আগের চেয়ে পেঁয়াজ আমদানি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। এজন্য দেশের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল