সাতক্ষীরায় পাইকারি বাজারে চালের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এক-দেড় মাসের ব্যবধানে প্রকার ভেদে মণপ্রতি ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) জেলার কয়েকটি চালকল ও পাইকারি বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
মিলার ও ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে নতুন বোরো চাল না ওঠা পর্যন্ত জেলার চালের বাজার এমন অস্থিতিশীল থাকবে।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে শহরের চালতেতলা এলাকার সাহা চাল কলের স্বত্বাধিকারী তপন সাহা জানান, দেড় মাস আগে যে মিনিকেট চাল মণ প্রতি ২ হাজার ২৪০ টাকা বিক্রি করেছেন সেটির দাম এখন ২ হাজার ৩২০ টাকা। মোটা জাতের ও আতপ চালের দাম প্রতি মণে ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরায় উৎপাদিত চালের একটি বড় অংশ জেলার বাইরে চলে যায়। ফলে স্থানীয় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমলে তখন দামও বেড়ে যায়। নতুন বোরো চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত জেলায় চালের বাজার এমন অস্থিতিশীল থেকে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার শহরের সুলতানপুর বড় বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০-৬২ টাকা দরে। একই ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৬ টাকা কেজিতে, যা এক মাস আগেও ২-৩ টাকা কম ছিল। অন্যদিকে মোটা বা আতপ চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বড়বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন জানান, চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ যেমন কম, তেমনি পাইকারিতে দাম বাড়ায় তার প্রভাব পড়েছে খুচরা চালের বাজারে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জেলায় আমন ও বোরো মৌসুমে প্রায় ছয় লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে জেলায়ই ৬০ শতাংশ চালের প্রয়োজন হয়। বাকি চাল চলে যায় গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
এদিকে সাতক্ষীরায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েছে গমের দাম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়াকে এর পেছনে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৩-৪ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোমরা বন্দর দিয়ে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমেছে।
সুলতানপুর বড় বাজারের খুচরা গম বিক্রি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাগর স্টোরে বৃহস্পতিবার গম বিক্রি হয় ৪২ টাকা কেজি দরে, যা দেড়-দুই মাস আগেও ৩৭-৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম জানান, সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় শস্যটির দাম বেড়েছে। তবে নতুন গম বাজারে ওঠার পাশাপাশি ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হলে দাম আবার কমে যাবে।
অন্যদিকে জেলার পাটকেলঘাটা বাজারের গম বিক্রি ও আটা উৎপাদন মিল মেসার্স মুকন্দ ফ্লাওয়ারের স্বত্বাধিকারী গোবিন্দ সাধু জানান, ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি গমের দাম কিছুটা বেড়েছে। দেড়-দুই মাস আগে যে গম ৩৫-৩৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন ৩৮-৩৯ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
ভোমরা বন্দরের গম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স গনি অ্যান্ড সনসের ব্যবস্থাপক অশোক কুমার জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত সরকার গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। মূলত এ কারণেই ভোমরা বন্দর দিয়ে গম আমদানি বর্তমানে বন্ধ আছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে ২ হাজার ৫০০ টন উৎপাদন লক্ষ্য নিয়ে ৬৭৩ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০০ হেক্টর কম। গত মৌসুমে জেলায় ৭৬৩ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ জানান, শুধু চাল ও গম নয়, অন্যান্য কৃষিপণ্যেরও অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাল ও গমের দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসন্ন রমজানে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে জেলা প্রশাসন সর্বদা বাজার মনিটরিং করছে।
খুলনা গেজেট/এনএম