সাতক্ষীরায় গত ১৬ দিনে পৃথক ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সাংবাদিক ও একজন কৃষি কর্মকর্তাসহ ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০জন। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা পুলিশ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, ২১ ডিসেম্বর সকালে ছেলেকে সাথে নিয়ে বাজার থেকে খাবার কিনে বাড়ি ফেরার পথে সাতক্ষীরার কলারোয়ার চান্দুড়িয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় আবু বক্কর সিদ্দিক (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি কাঁদপুর পূর্ব পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মাজেদ সরদারের ছেলে। এঘটনায় আহত হয় তার চার বছরের ছেলে রাফিদ উদ্দিন সিদ্দিক।
গত ২০ ডিসেম্বর দুপুরে ইজিবাইকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় সাতক্ষীরা নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক শেখ জাহিদ হাসান (২৮)। রাজধানী ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি মারা যান। তিনি শহরের বাঁকাল এলাকার শেখ মোকারম আলীর ছেলে। একই দিন রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরার বিনেরপোতা এলাকায় কামরান ফিলিং স্টেশনের কাছে পেট্রোলের ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে হেলপার রিয়াজ হোসেন (২০) মারা যায়। খুলনার খালিশপুর থানার কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা।
গত ১৮ ডিসেম্বর জমি চাষ করে ফেরার পথে ট্রাক্টর উল্টে উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সোহরাব হোসেন (৩৮) নামরে একজন নিহত হন। তিনি সদর উপজেলার ছনকা পূর্বপাড়া এলাকার মোঃ আবুল খায়েরের ছেলে।
এদিকে, ১৬ ডিসেম্বর বিনেরপোতা বিসিক শিল্প নগরীর সামনে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয় তিন মটরসাইকেল আরোহী। নিহতরা হলেন তালা উপজেলার সুজনসাহা গ্রামের নিরঞ্জন মলিকের ছেলে তাপস মলিক (২০), খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলি গ্রামের সূর্য্য দেবনাথের ছেলে মিলন দেবনাথ (১৮) ও একই উপজেলার বাঁকা গ্রামের উত্তম সেন এর ছেলে সুব্রত সেন (২২)। তারা সবাই স্বর্ণের দোকানের কারিগর ছিল। ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজার থেকে বাসায় ফেরার সময় ইঞ্জিনভ্যানের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে মারা যান জেলা সদরের ঝাউডাঙ্গা এলাকার সাংবাদিক মনোরঞ্জন ঘোষ (৪০)।
গত ১০ ডিসেম্বর কলারোয়ায় মোটরসাইকেল ও নছিমের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাদরাসা ছাত্র আরিফুল ইসলাম আরিফ (১৭) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। সে কলারোয়ার রায়টা বিশ্বাসপাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে। এঘটনায় আহত হয় তার বন্ধু উপজেলার মেহমানপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন। তার বাড়ি উপজেলার মেহমানপুর গ্রামে। ৯ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার ভোমরায় ট্রাক-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে ব্যবসায়ী যশোর জেলার অভয়নগর এলাকার রামপদ সেনের ছেলে ব্যবসায়ী সাধন কুমার সেন (৪০) ও চালক সদর উপজেলার ভোমরা গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে কবির হোসেন (৩৫)। এঘটনায় আহত হয় অপর একজন। গত ৬ ডিসেম্বর জেলার পাটকেলঘাটায় পিকআপ-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন সাংবাদিক মহিদুল ইসলাম (৩৬)। তিনি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার মুজিদ বিশ্বাসের ছেলে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাতক্ষীরা শহরে ৫০ বছর আগে যে সড়ক ছিল এখনো তাই আছে, কিন্তু জনসংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সামলাতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া একই সড়কে ইঞ্জিনভ্যান, ব্যাটারি ভ্যান, ইজিবাইক, গ্রবাংলা, টেম্পু, লেগুনা, মাহিদ্রা থ্রি হুইলার, বাস, ট্রাক, পিক-আপ, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও পণ্যবাহন যাতায়াত করে। সড়ক সংকীর্ণ হওয়ার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।
এছাড়া বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোকেও দুর্ঘনার জন্য দায়ী করে তিনি আরো বলেন, দুর্বল ট্রাফিকিং ব্যবস্থাও অনেকাংশে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া অদক্ষ চালকের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তিনি সামাজিকভাবে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এসব নিহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
খুলনা গেজেট/কেএম