বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার ২৭ আগস্ট সকাল থেকে আবারও সাতক্ষীরায় শুরু হয়েছে থেমে থেমে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত। নদীর পানি বৃদ্ধি ও ভারী বর্ষনের ফলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বানভাসী উপকূলীয় এলাকার মানুষ।
জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগরের কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বেড়েছে বানভাসিদের দুর্ভোগ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে টানা তিন মাসের অধিক সময় ধরে পানি বন্দী থাকায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে উপকুলীয় এলাকার লক্ষাধিক মানুষের জীবন।
বিশেষ করে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর (আংশিক) এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা (আংশিক) ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম এখনও প্লাবিত।
নদীর লোনা পানিতে বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়ায় এলাকায় দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। স্রোতের টানে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। ধ্বসে পড়েছে শত শত কাঁচাঘর বাড়ি। প্লাবিত অঞ্চলে ভেঙ্গে পড়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। গবাদি পশু ও সাপ পোকামাকড় মরে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছেন পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, বাঁধ ভেঙ্গে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর পানিতে ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের মধ্যে ২০টি প্লাবিত। অনেক পরিবার ঘরে বসবাস করতে পারছে না। অনেকে নৌকায় ও কলার ভেলায় চুলা পেতে রান্না করে খাচ্ছে। টিউবওয়েল গুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গরু ছাগল, হাঁস, মুরগি, পশু, পাখি মরে পুরো এলাকা দূষিত হয়ে পড়েছে। বসতবাড়ি না থাকায় অনেকে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে প্রতাপনগর ইউনিয়নে।
তিনি আরো বলেন, গত দু’দিন পানি একটু কমলেও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে। ফের নদ-নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি বানভাসি মানুষের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যহত থাকলে মানুষের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পাবে।
সরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাল বিতরণ করা হলেও অনেকের রান্না করে খাবার ব্যবস্থাও নেই। খুবই কষ্টে আছে আমার ইউনিয়নের মানুষ। এই মূহুর্তে ত্রানের চেয়ে বাঁধ সষ্কার করা খুবই জরুরী। তিনি এলাকায় টেসকই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতাপনগর এলাকায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌছে দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পুরো ইউনিয়নে প্রায় ২৫ টনের মত চাউল বিতরণ করা হয়েছে।
যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৯৫ মেট্রিকটন চাউল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সাথে সেনাবাহিনী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, লঘুচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/নাফি