সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় মৎস্য সেক্টর এবং আমন ক্ষেত ও বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬ থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ২৩২মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃষ্টির পানিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায় ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর জমির ১৯ হাজার ৪৫৯টি মৎস্য ঘের পানিতে ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। একই সাথে পানিতে তলিয়ে রয়েছে ১ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ও ৮৬০ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত।
জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ মশিউর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৯ হাজার ৪৫৯ টি ঘের পানিতে ভেসে গেছে। যার আয়তন ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর। মৎস্য সেক্টরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ১৫১ হেক্টর জমির ৬ হাজার ৬৯৫ টি ঘের প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১৮ কোটি ৫ লাখ টাকা। শ্যামনগর উপজেলায় ৩ হাজার ৫৯১ হেক্টর জমির ৫ হাজার ৭৯২ টি মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া আশাশুনি উপজেলায় ৪ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমির ৬ হাজার ৯৭২ টি মৎস্য ঘের বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এদিকে জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ভারি বর্ষণে জেলার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলায় প্রায় ১ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমির আমন বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। একই সাথে সদ্য রোপণকৃত ৮৬০ হেক্টর জমির আমন ধান পানির নিচে রয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ এই মুহুর্তে নিরুপণ করা সম্ভব নয় জানিয়ে কর্মকর্তারা আরো বলেন, দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। কিন্তু পানি স্থায়ী হলে আমন বীজ তলা ও রোপা আমনে পঁচন ধরবে। সে ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হবে তা সহসায় কাটিয়ে উঠতে পারবে না কৃষক।
তবে, জেলাব্যাপী সকল সেক্টরে যে ক্ষতি হয়েছে তা এখনো পর্যন্ত সঠিকভাবে নিরুপণ করতে পারেনি বলে স্ব স্ব দপ্তর থেকে জানিয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাছেদ জানান, অতি বৃষ্টির কারণে জেলায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা সঠিকভাবে নিরুপণ করতে একটু সময় লাগে। এ বিষয়ে সকল উপজেলায় একযোগে কাজ করছে। রোববারের মধ্যে সঠিকভাব ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, পানিবন্দি মানুষের কথা বিবেচনা করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাৎক্ষণিক ২৫৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর এই তিন উপজেলায় ১ লাখ করে মোট ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, চলমান অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে/জনদুর্ভোগ লাঘবে অবৈধ নেট-পাটা স্থাপনকারীদেরকে স্ব-উদ্যোগে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি অনেকে নেট-পাকা অপসারণ করে নিয়েছে। যারা এখনো নেট-পাটা অপসারণ করেনি তাদের বিরুদ্ধে আজ শনিবার (৩১ জুলাই) থেকে সকল উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নেতৃত্বে অভিযান শুরু হবে। এতে বাধা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, জেলায় বিভিন্ন সেক্টরে যে ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসাব এখনো নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে কাজ চলছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে জেলায় ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা সম্ভব হবে। তবে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পানিবন্দি জীবনযাপন করছে তাদের জন্য ইতিমধ্যে চাল এবং নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম