ভারত সরকার কর্তৃক পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার খবরের মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সাতক্ষীরায় পেঁয়াজের দাম একলাফে কেজিতে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা বেশি হয়েছে। বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড়বাজারে গিয়ে দেখা গেছে ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে শুক্রবার রাতে পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০/৯৫ টাকা। খুচরা ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। রপ্তানী বন্ধ ঘোষণার পর রাত পার না হতেই শনিবার পাইকারি বাজারে সেই পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। অনুরুপ দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। অস্বাভাবিক এই দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
শহরের মুনজিতপুর এলাকার খুচরা সবজি ব্যবসায়ি ইকবাল হোসেন জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে বেশ কয়েকজন ক্রেতা আমার দোকানে আসে পেঁয়াজ কিনতে। তারা কোন কিছু না জানিয়ে আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যায়। এভাবে ওই রাতেই আমার সব পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায়। সকালে সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি বাজারে এসে দেখি তারা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছে। বেশ কয়েক ঘন্টা পর ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ পাইকারি ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেন তারা। বাধ্য হয়ে অল্প পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছি।
সাতক্ষীরা পৌরসভার কাটিয়া এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান জানান, পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমন খবর পেয়ে শুক্রবার রাতেই বড়বাজারে এসেছিলাম। ৯০ টাকার পেঁয়াজ কিনেছিলাম ১০০ টাকায়। অথচ রাত পার না হতেই শনিবার বড়বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। এভাবে হঠাৎ করে একটা জিনিসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করলে ক্রেতারা সেটা কিনবো কি করে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেই। যে কারনে ব্যবসায়িরা তাদের ইচ্ছামত জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।
সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ি আব্দুল আজিজ জানান, শুক্রবার দিনভার আমরা ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ পাইকারি ৯০/৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। সকালে বাজারে এসে ভোমরায় ফোন করে জানতে পারলাম, ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় সেখানে ১৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কিছুক্ষন বন্ধ রেখে মাত্র ১০ টাকা লাভে ১৬০ কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করি।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নওশাদ দেলওয়ার রাজু জানান, বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। এখনো ব্যবসায়িদের স্টকে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। রপ্তানি বন্ধ ঘোষনা শুনেই একধরণের অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে দাম বাড়াচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আহবান করি, দ্রুত এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, অনেকের এলসি খোলা থাকলেও পণ্য বুকিং না হওয়ায় তারা ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সরকারের উচিৎ ভারত সরকারের সাথে কথা বলে জলদি পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করা। তা না হলে পেঁয়াজের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে।
খুলনা গেজেট/এএজে