দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক শহীদ স.ম. আলাউদ্দিন হত্যার বিচার এই সাতক্ষীরার মাটিতে একদিন হবেই। গত ২৬ বছর ধরে সম আলাউদ্দিন হত্যার বিচার হয়নি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এর জন্য কোন দল, কোন ব্যক্তি বা কোন গোষ্ঠী সরাসরি দায়ী নয় বরং আইনের কিছু খামতি এই বিচারকে বাধাগ্রস্থ করেছে। আলাউদ্দীনের খুনীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন একদিন তাদের এই পাপের শাস্তি নিতেই হবে।
শহীদ সম আলাউদ্দিনের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী ও ২৭ বছরে উত্তরণ উপলক্ষ্যে শনিবার (১৮ জুন) শহরের এলজিইডি মিলনায়তনে সাতক্ষীরার সাংবাদিক ঐক্য আয়োজিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সম আলাউদ্দিন ও সাতক্ষীরা’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে এই অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, একজন আলাউদ্দিনকে হত্যার পর তার বিচার না হওয়া সংস্কৃতি আরও হত্যাকে উৎসাহ যোগায়। আমরা প্রস্তাব করছি বিচার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কয়েক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই বিচার ত্বরান্বিত করার দাবি জানাতে হবে। ২৬ বছর ধরে আমরা বিচার বাস্তবায়নের চেষ্টা করেও তা আদালতের কাঠগড়া পর্যন্ত আমাদের দাবি তুলে ধরতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। এ বিষয়ে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট বিচারকের সাথে সাক্ষাৎ করে বিচার বাস্তবায়নের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা হবে।
সাংবাদিক ঐক্যের আহবায়ক সুভাষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে নাগরিক সংলাপে বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন মশু, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক শেখ আজহার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা আনম তারেক উদ্দিন, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, প্রেসক্লাবের সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলী সুজন প্রমুখ।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যথার্থভাবে বিচার আদায় করতে পারিনি। শহীদ সম আলাউদ্দিন গণমানুষের নেতা ছিলেন। ১৯৯৬ এর নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি নিজেও এমন একটি গুপ্ত হত্যার শিকার হতে চলেছিলাম। কিন্তু আমার পরিচিত কয়েকজন তারা আমাকে সতর্ক করে দিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশে যথাযথ সুরক্ষা দিয়ে এই গুপ্ত হত্যাকে কৌশলে প্রতিহত করেছিলেন। আলাউদ্দিন হত্যার পর আমার সেই ধারনাই হলো যে, রাজনৈতিক নেতারা কোন সময় নিরাপদ নন। বিশেষ করে নির্বাচনে আসন দখল প্রতিযোগিতায় নেমে তারা ভাড়াটে হিসাবে রাজনৈতিক নেতাদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকে। হত্যার দীর্ঘ ২৬ বছর পরও এই বিচারের জন্য আমরা বারবার আবেদন জানাচ্ছি। নিশ্চয়ই একদিন সাতক্ষীরার উন্নয়নের উপকার, শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী সহ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ভোমরা স্থলবন্দরের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা এবং সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সূতিকাগার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সম আলাউদ্দিনের বিচার আদায়ে সব রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
নাগরিক সংলাপে চ্যানেল আইয়ের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ একটি মুখবন্ধ তুলে ধরে তা পাঠ করে শোনান। এতে তিনি শহীদ সম আলাউদ্দিনের জীবনের সকল দিক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেন। যার মধ্যে ছিল, কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, শিল্প ভিত্তিক বানিজ্য প্রতিষ্ঠা, কারিগরী শিক্ষা সম্প্রসারণ, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা, সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স প্রতিষ্ঠাসহ বহু দিক। একারনে তিনি ঢাকা, কোলকাতা, দিল্লী সকল স্থানে সংশ্লিষ্টদের কাছে যথাযথ আবেদন করেছিলেন।
নাগরিক সংলাপে অংশ নিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াজেদ কচি, দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, বিশিষ্ট এনজিও ব্যক্তিত্ব মাধব চন্দ্র দত্ত, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ বেতারের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ফারুক মাহবুবুর রহমান, আলাউদ্দিন কন্যা লায়লা পারভিন সেঁজুতি, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হারুনার রশিদ, বাসদ নেতা এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জাসদ অপরাংশের নেতা সুধাংশু শেখর সরকার, উদীচির শেখ সিদ্দিকুর রহমান, গণফোরাম নেতা আলী নূর খান বাবুল, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম চক্রবর্তী প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/ আ হ আ