অবশেষ দুর্নীতির অভিযোগে বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) হলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল গনি। তাকে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। রোববার (২৬ মে ) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-১) মো. আব্দুল আলীম এক অফিস আদেশে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল গনিকে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলায় বদলির চিঠি দিয়েছেন।
বদলির আদেশে বলা হয়েছে, তিনি বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্বভার ২৯ মে’র মধ্যে হস্তান্তর করবেন। অন্যথায় ৩০ মে থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (Stand Released) বলে গণ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে।
এ বদলির আদেশের ফলে সাতক্ষীরার প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের মাঝে বিরাজ করছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। সাতক্ষীরা সদরে দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষা অফিসার আবদুল গনির বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে শিক্ষা অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। নিজের অনৈতিক কর্মকান্ড ও দুর্নীতি চাপা দিতে পুষেছেন কয়েকজন দালাল। প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে শিক্ষা অফিসে বসে এসব দালালরা সাধারণ শিক্ষকদের শাসাতেন। প্রতিবাদ করতে গেলে সাধারণ শিক্ষকরা নির্যাতনের শিকার হতেন। আবদুল গনির ঘনিষ্ট সহচর নজরুল ইসলাম ও মাসুম বিল্লাহ অবৈধভাবে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায় ‘রাসেল সোনা’ বই বিক্রি নিয়ে সাতক্ষীরায় চরম বিতর্কের জন্ম দেন আবদুল গনি। শিক্ষকরা বলেন, আমরা শেখ রাসেলসহ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সুনামকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ইচ্ছাকৃতভাবে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর ৬০০টাকার বই ৩০০০টাকা বাধ্যতামূলকভাবে সকল বিদ্যালয়ে বিক্রি করে ৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার অপচেষ্টা করেন আবদুল গনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লেখা বইয়ের মূল্য ১৫০ টাকা। বইটি বিদ্যালয়ে সংগ্রহের কথা বললে আবদুল গনি শিক্ষকের সাথে মারমুখী আচরণ করেন।
সূত্রটি আরও জানায়, বিগত ৩ বছরে বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের কাজ হতে বিপুল অর্থ উত্তোলন করেছেন। ক্ষুদ্র মেরামতের ৯২টি বিদ্যালয় হতে ৬০হাজার টাকা করে মোট পঞ্চান্ন লক্ষ টাকা, প্রতিবছর স্লিপ ফান্ড হতে ৮হাজার টাকা হারে ১৬ লক্ষাধিক টাকাসহ তিন বছরে ৫০ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেন আবদুল গনি। এছাড়া সিএসএসআর হতে ভ্যাটের নামে ৪২টি স্কুল থেকে ৩৫০০ টাকা করে এক লক্ষ ৪৭হাজার টাকা, নিড বেজড প্লেয়িং স্কুল প্রতি ৫৫হাজার টাকা দরে চুক্তি করিয়ে দু’বছরে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা আত্মাসাৎ করেছেন আবদুল গনি। ওয়াশব্লকের কাজ না করে তিন লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রুটিন মেরামত থেকে স্কুল প্রতি ১০হাজার টাকা তিন বছরে ত্রিশ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি সূত্রের। এভাবে বিগত ৩ বছরে ২ কোটি টাকার বেশি অর্থ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছেন বলে সূত্রটি দাবি করে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের উত্তরপত্র আগের অনেক পুরাতন কাগজপত্র স্টোররুম থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করে ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
আবদুল গনি’র নিজস্ব নামে বরাদ্দকৃত মোটরসাইকেল রয়েছে। যার নং ‘ঢাকা মেট্রো হ ৩৪-৬৭১৩। তিনি নিজের মোটরসাইকেল ব্যবহার না করে ডিপিইও অফিস হতে মোটরসাইকেল (যার নং ‘ঢাকা মেট্রো হ ৩৫-২১৮০’ ইয়ামাহা ক্যাক্স) নিয়ে ব্যবসার করছেন। এভাবে তিনি সরকারি ৪ লক্ষ টাকার সম্পদের ক্ষতি সাধন করে অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে আবদুল গনি বলেন, হ্যাঁ আমার বদলি হয়েছে। আমি বদলীর আদেশ হাতে পেয়েছি। কি কারণে বদলি হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, সরকারি চাকরির সাধারণ নিয়মেই বদলি হয়েছে। এছাড়া অন্য কোন কারণ নেই।
খুলনা গেজেট/এএজে